Privacy policy | customer support | FAQ
ঘোষণাপত্র
গণসংহতি আন্দোলনের ঘোষণাপত্রটি ইতিহাসের আলোকে এই জনপদের মানুষের অধিকার ও মর্যাদার সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একটি নতুন দিশা উপস্থাপন করে। এটি বিদ্যমান শোষণমূলক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গনির্বিশেষে সবার সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক, সাম্যভিত্তিক, এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানায়। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস রচনা এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য এই ঘোষণাপত্র এক অত্যাবশ্যক দিকনির্দেশনা, যা স্বাধীনতার চেতনা ও জাতীয় ঐক্যের প্রকৃত রূপ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি বহন করে।
এই জনপদের মানুষ হাজার বছর ধরে সংগ্রাম করছেন। তাদের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য, অধিকারের জন্য, আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। ইতিহাসের একটা পর্যায় পর্যন্ত এই বৈষম্য, নিপীড়ন, নিগ্রহ যেহেতু ধর্মীয় চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছে শাসকদের মাধ্যমে, বিপরীতে এর বিরুদ্ধে সংগ্রামও প্রধানত তাকে অবলম্বন করেই গড়ে উঠেছে। এই সংগ্রাম কখনো জাত-পাত বিরোধী ভাবের অনুশীলন, কখনো সংস্কার আন্দোলন, কখনো ধর্ম পরিবর্তন আকারে হাজির হয়েছে। পরবর্তীকালে তা জমিদার, মহাজন, উপনিবেশিক প্রভুদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা, সাঁওতাল বিদ্রোহ, ফরায়েজি আন্দোলন, সিপাহি বিদ্রোহ ইত্যাদি সংগ্রামে ধর্ম প্রতিরোধের একটা উপাদান হলেও সেগুলো মর্মবস্তুর দিক থেকে ছিল জাগতিক লড়াই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরবর্তীতে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এই ধারার স্বাভাবিক বিকাশ আকারে বিকশিত না হয়ে চাপিয়ে দেয়া উচ্চবর্গীয় রাজনীতির আকারেই বিকাশ লাভ করেছে। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়ের রাজনীতিতেই ধর্মের বিভাজনকে উভয় সম্প্রদায়ের উদীয়মান মধ্যশ্রেণীর স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুইটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। এই পূর্ববাংলার মানুষ বিপুল পরিমাণে পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছেন জমিদার-মহাজন ও ইংরেজ শাসকদের থেকে তাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে। কিন্তু অচিরেই তাঁরা উপলব্ধি করেছেন তাঁরা যে আকাঙ্ক্ষায় পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্র শুধু তা পূরণে অক্ষম তাই নয়, তারা নতুন ধরনের উপনিবেশিক শাসন এই পূর্ব বাংলার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এই মনোভাবের প্রথম স্ফূরণ ঘটে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। উপনিবেশিক কায়দায় পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সর্বত্র পর্বতপ্রমাণ বৈষম্য ইত্যাদি মানুষের ভেতরে বঞ্চনার বোধকে তীব্র করে। ফলশ্রুতিতে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন ও ৬ দফা বিপুল জনসমর্থন লাভ করে। এরপর আইয়ুবের শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক জনতার আন্দোলন যে গতিপ্রাপ্ত হয় তার ফলশ্রুতিতে ঘটে ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। আইয়ুব সরকার ক্ষমতা ত্যাগ করে ‘৭০-এ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ‘৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করলেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে। ফলে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জনগণের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি শাসকরা জনগণের এই বিপুল উত্থানকে দমনের জন্য সেনাবাহিনী নিয়োগ করে বাংলাদেশের জনগণের ওপর হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে। যার ফলশ্রুতিতে এদেশের জনগণ এক মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জন্ম হয় আমাদের ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়ের, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের। নয় মাস ধরে এক রক্তপাতময় যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জনগণের ভেতর এক অভূতপূর্ব সংগ্রামী ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। লক্ষ প্রাণের আত্মদান আর লক্ষ নারীর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। স্বাভাবিকভাবেই এই বিপুল আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা নতুন রাষ্ট্রের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও ছিল বিশাল ।
এই জনপদের মানুষ হাজার বছর ধরে সংগ্রাম করছেন। তাদের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য, অধিকারের জন্য, আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। ইতিহাসের একটা পর্যায় পর্যন্ত এই বৈষম্য, নিপীড়ন, নিগ্রহ যেহেতু ধর্মীয় চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছে শাসকদের মাধ্যমে, বিপরীতে এর বিরুদ্ধে সংগ্রামও প্রধানত তাকে অবলম্বন করেই গড়ে উঠেছে। এই সংগ্রাম কখনো জাত-পাত বিরোধী ভাবের অনুশীলন, কখনো সংস্কার আন্দোলন, কখনো ধর্ম পরিবর্তন আকারে হাজির হয়েছে। পরবর্তীকালে তা জমিদার, মহাজন, উপনিবেশিক প্রভুদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা, সাঁওতাল বিদ্রোহ, ফরায়েজি আন্দোলন, সিপাহি বিদ্রোহ ইত্যাদি সংগ্রামে ধর্ম প্রতিরোধের একটা উপাদান হলেও সেগুলো মর্মবস্তুর দিক থেকে ছিল জাগতিক লড়াই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরবর্তীতে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এই ধারার স্বাভাবিক বিকাশ আকারে বিকশিত না হয়ে চাপিয়ে দেয়া উচ্চবর্গীয় রাজনীতির আকারেই বিকাশ লাভ করেছে। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়ের রাজনীতিতেই ধর্মের বিভাজনকে উভয় সম্প্রদায়ের উদীয়মান মধ্যশ্রেণীর স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুইটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। এই পূর্ববাংলার মানুষ বিপুল পরিমাণে পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছেন জমিদার-মহাজন ও ইংরেজ শাসকদের থেকে তাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে। কিন্তু অচিরেই তাঁরা উপলব্ধি করেছেন তাঁরা যে আকাঙ্ক্ষায় পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্র শুধু তা পূরণে অক্ষম তাই নয়, তারা নতুন ধরনের উপনিবেশিক শাসন এই পূর্ব বাংলার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এই মনোভাবের প্রথম স্ফূরণ ঘটে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। উপনিবেশিক কায়দায় পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সর্বত্র পর্বতপ্রমাণ বৈষম্য ইত্যাদি মানুষের ভেতরে বঞ্চনার বোধকে তীব্র করে। ফলশ্রুতিতে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন ও ৬ দফা বিপুল জনসমর্থন লাভ করে। এরপর আইয়ুবের শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক জনতার আন্দোলন যে গতিপ্রাপ্ত হয় তার ফলশ্রুতিতে ঘটে ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। আইয়ুব সরকার ক্ষমতা ত্যাগ করে ‘৭০-এ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ‘৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করলেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে। ফলে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জনগণের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি শাসকরা জনগণের এই বিপুল উত্থানকে দমনের জন্য সেনাবাহিনী নিয়োগ করে বাংলাদেশের জনগণের ওপর হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে। যার ফলশ্রুতিতে এদেশের জনগণ এক মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জন্ম হয় আমাদের ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়ের, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের। নয় মাস ধরে এক রক্তপাতময় যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জনগণের ভেতর এক অভূতপূর্ব সংগ্রামী ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। লক্ষ প্রাণের আত্মদান আর লক্ষ নারীর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। স্বাভাবিকভাবেই এই বিপুল আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা নতুন রাষ্ট্রের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও ছিল বিশাল ।