মোহাম্মদ বিন তোঘলক কেবল মাত্র বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের প্রতিতুলনা হতে পারেন। আমলারা আপাতদৃষ্টে প্রতিভাবান (অন্তত মেনে নিন, না হলেও একক ক্ষমতাবান এটুকু তো স্বীকার করবেন!), কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিষয়টা নিয়ে তারা হয়তো আদৌ জানেন না। ফলাফল? আজকের প্রথম আলোর এই সংবাদ শিরোনাম ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে একযোগে ১১৪ চিকিৎসককে বদলি‘।
এটা তো খুবই সত্যি যে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোকে শক্তিশালী করা দরকার। কিন্তু সেটা মনে আসলো মহামারীর একদম মাঝখানে? এখন আসলেই স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের সাধ্য আছে এই চিকিৎসকদের জেলা/উ্পজেলা পর্যায়ে পাঠাবার? কাগজে কলমে যদি পাঠাতেও পারেন, তাদের দিয়ে কাজ করাবার সাধ্য হবে? তাদের সেখানে উপস্থিতিটাকে সেবায় রুপান্তর করা সম্ভব হবে?
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কী দশা হবে এই পরিমান চিকিৎসককে সরিয়ে নিলে, যেটা চট্টগ্রাম বিভাগে চিকিৎসার মেরুদণ্ড? সেখানকার পরিচালক নিজেও এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, বা তার সাথে পরামর্শ করা হয়নি।
সরকারের এই কাজকে আতঙ্কপ্রসূত হুড়মুড় ছাড়া অন্য কোন ভাবে দেখা সম্ভব, যদি না এর অন্য কোন গূঢ় তাৎপর্য থেকে থাকে? অথচ এই দেড় বছরে কোভিড মোকাবেলায় চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে এমনকি স্বেচ্ছাসেবী পর্যন্ত প্রশিক্ষত করা সম্ভব ছিল পুরো প্রক্রিয়াটাকে যে টুকু সামর্থ্য আছে, সেটুকু দিয়েই যথাসাধ্য শুশ্রুষা দেয়ার জন্য। প্রয়োজন ছিল বড় আকারের ফিল্ড হাসপাতাল, যেখানে বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেয়া যাবে। যেমন এ্কটা হাসপাতাল করা এবং ভেঙে ফেলার দুর্নীতি আমরা দেখলাম বসুন্ধরা এলাকায়। অ্যামবুলেনস তৈরি রাখা, অক্সিজেন তৈরি রাখা– এই সবই কর্তব্য ছিল।
ওদিকে বহু হাসপাতালে যে রসদ ফুরিয়ে যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারে যে রসদও আর বাকি নাই, সেই সব বিষয়ে এই তোঘলকরা কী করবেন, কেউ জানে কি না, জানি না।
[ মোহাম্মদ বিন তোঘলক দৌলতাবাদ নামের নতুন রাজধানী করেছিলেন, জায়গাটা উত্তর ভারত আর দাক্ষিণ্যাত্য উভয়কে নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলগতভাগে গুরুত্বপূর্ণ। দিল্লীবাসীকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জোর করে। পথেই বহু মানুষের মৃত্যু হয়। দৌলতাবাদের সবই ঠিক ছিল, খালি সমস্যা ছিল একটাই, পানি ছিল না জায়গাটাতে। ফলে কয়েক বছরের মাথায় এই বিপুল মানুষকে আবারও দিল্লীতে ফিরে যেতে হয়, এ্বং আরও বহু মানুষের মৃত্যু। (আরও কিছু কাজের সাথে) এই বিবেচনাহীন নতুন রাজধানী বানাবার কাণ্ডের কারণেই হিন্দুস্তানের সবগুলো ভাষায় ‘তুঘলকি’ শব্দটার জন্ম হয়েছে। ]
এই লিখার সাথে সম্পর্কিত ফিরোজ আহমেদের আরেকটি লিখা পড়তে ক্লিক করুন
চিকিৎসকরা কেন স্বাস্থ্য সচিব হবেন না?
ফিরোজ আহমেদ
সদস্য, রাজনৈতিক পরিষদ
গণসংহতি আন্দোলন
জ/আক-৬/২