You are currently viewing অবিলম্বে পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেছে ৪টি সংগঠনের জোট

অবিলম্বে পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেছে ৪টি সংগঠনের জোট

(স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদ, ছাত্র-যুব- শ্রমিক অধিকার পরিষদ, রাষ্ট্রচিন্তা ও গণসংহতি আন্দোলনের যৌথ কর্মসূচি ঘোষণাকালীন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য)

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। গভীর শ্রদ্ধা জানাই যাদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে, মুক্তিযুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা রাখা সকল নাগরিককে। শ্রদ্ধা জানাই সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে যাদের সমর্থন, ত্যাগ ছাড়া এ বিজয় প্রায় অসম্ভব ছিল। 

বন্ধুগণ,
পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনে পূর্ববাংলার মুসলমান ও নিম্নবর্গের হিন্দুরা প্রধান ভূমিকা পালন করে। এ রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডের মানুষ ঔপনিবেশিক শাসন ও জমিদারী নিপীড়ন থেকে মুক্ত হবেন বলে মনে করেছিলেন;  অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও জাতপাতের বৈষম্য থেকে মুক্ত হবেন বলে মনে করেছিলেন; পুঁজি ও সম্পদ পাচার বন্ধ হবে, ফলে সর্বস্তরের জনগণের উন্নয়ন তরান্বিত হবে বলে মনে করেছিলেন। তাদের আশা ভঙ্গ হতে দেরী হয়নি, পাকিস্তান রাষ্ট্রে পূর্ববাংলাকে নতুন করে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ বানানো হয়। প্রথম থেকেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামো ছিল এককেন্দ্রিক, একপদকেন্দ্রিক এবং তা পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীভূত ছিল। তারা বৈচিত্র্যের ভেতর ঐক্যের গণতান্ত্রিক ধারণা ভূলুণ্ঠিত করে এক সংস্কৃতি এক ভাষা দিয়ে পাকিস্তানের ঐক্যের অগণতান্ত্রিক ধারণা প্রতিষ্ঠার পথ গ্রহণ করে। পূর্ববাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে অধিক জনসংখ্যার দেশ হলেও এবং বেশি সম্পদ সৃষ্টি করলেও পশ্চিম পাকিস্তানে অনেক বেশি বিনিয়োগ ও উন্নয়ন হচ্ছিল। শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি-বাকরি সমস্ত ক্ষেত্রেই পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিশেষত পাঞ্জাবীদের ছিল অগ্রাধিকার। বিভিন্ন আইনি-বেআইনি প্রক্রিয়ায় পূর্ববাংলা থেকে সম্পদ পাচার করে পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়েছিল। ফলে পাকিস্তানের দুই অংশের ভেতর অর্থনৈতিক, এমনকি মর্যাদার বৈষম্য প্রকট রূপ লাভ করে। 

এই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য মেনে নিতে পারেনি এ ভূখণ্ডের মানুষ, এর বিরুদ্ধে বারবার রুখে দাঁড়িয়েছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন। ভাষা আন্দোলন, গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার দাবীতে ছাত্র আন্দোলন, ন্যায্য মজুরি ও মানবিক মর্যাদার দাবীতে শ্রমিক আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসনের জন্য ৬ দফার আন্দোলন এবং শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষের মুক্তির দাবীতে ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই এসেছে মুক্তিযুদ্ধ। এদেশের শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-চাকুরিজিবি-ব্যবসায়ী-নারী–পুরুষের সম্মিলিত সংগ্রাম, জীবনদান আর ত্যাগের বিনিময়ে এসেছে আমাদের স্বাধীনতা।

বন্ধুগণ,
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক দীর্ঘ ধারাবাহিক সংগ্রাম, লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া এক জনযুদ্ধের ফসল। একটা সামান্য বিরোধিতাকারী অংশ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বাংলাদেশের জনগণের প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বা সহায়তাকারী। সত্তরের গণপরিষদ নির্বাচনে এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ১৬৭ আসনে জিতিয়ে সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করে। মুক্তিযুদ্ধে  যেমন বিভিন্ন দল ও দলের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেছেন; তেমনি বিভিন্ন শ্রেণী, পেশার মানুষ; বিভিন্ন ধর্ম, লিঙ্গ, জাতির মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন, অবদান রেখেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার ও আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছেন অগণিত মানুষ। লক্ষ  লক্ষ মানুষের জীবনদান ও মা–বোনের সম্ভ্রম হারানো, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ও ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হওয়াসহ বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। এরা মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের মুক্তি দেখেছিলেন। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ড মুক্ত করার স্বাধীনতা যুদ্ধ নয়; মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে ও ব্যাপক জনগণের সচেতন অংশগ্রহণে সংগঠিত একটি জনযুদ্ধ 

Zonayed saki, Ganosamhati Andolon
Zonayed saki on press conference

বন্ধুগণ,
দেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের এই রূপকে মুছে দেয়ার ও মুক্তিযোদ্ধাদের খাটো করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়, যেমন – 

ক. বিজয় অর্জনের এক বছরের মাথায় বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়। কিন্তু এই সংবিধানের কোথাও মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে একটি কথাও বলা হয় নাই। সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধে জনগণের অবদান স্বীকার করেও কিছু বলা হয় নাই। এবং অন্য জাতিসত্তার মানুষদের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে।  

খ. যুদ্ধে অবদান রাখার জন্য বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম খেতাবটি কোন বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া হয় নাই।

গ. ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়। এতে নতুন রাষ্ট্রে জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়। কিন্তু ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতিতে এই তিন নীতি স্থান পায় নাই। এমনকি ’৭২-এর সংবিধানের কোথাও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংযুক্ত করা হয় নাই। 

ঘ. আওয়ামী লীগ তাদের বয়ানে অন্যদল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের অবদান অস্বীকার করে নিজেদের  মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী একমাত্র দল হিসেবে প্রচার করে থাকে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধকে একটি দলের ও তার নেতার একক বীরত্বগাথায় পরিণত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি আওয়ামী লীগের ন্যায় মুক্তিযুদ্ধের বয়ান তার দলীয় সংকীর্ণতায় উপস্থাপন করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতাকারী দল ও ব্যক্তিকে তার রাজনৈতিক সাথী বানানোর পথ প্রশস্ত করে।  

ঙ. বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ভিন্ন মতকে দমন করা হচ্ছে। সরকারের কোন কার্যক্রমের ন্যায়সঙ্গত সমালোচককে স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ফ্যাসিবাদী ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

এভাবে একটি জনযুদ্ধকে গুটিকয়েকের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরিণত করা হয়েছে এবং যুদ্ধের গৌরবের  মালিকানা থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা হয়েছে। 

বন্ধুগণ,
পাকিস্তান রাষ্ট্রের যেসব বৈশিষ্ট্যের কারণে তার বিরুদ্ধে এদেশের জনগণ দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম করেছেন, প্রাণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছেন কার্যত তার প্রায় সবকটি বৈশিষ্ট্যই নতুনরূপে হাজির আছে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে। স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সম্পদ পাচার, বিপুল বৈষম্য, জনগণকে উপনিবেশিক কায়দায় নিয়ন্ত্রণ, গণবিরোধী শাসন – এর সবকটিই আজও বহাল রয়েছে, ক্ষেত্র বিশেষে এসব নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর হয়েছে। বহাল আছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী উপনিবেশিক নিবর্তনমূলক ও সম্পদ পাচারের অনুকূল আইন-কানুন। সর্বোপরি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী উপনিবেশিক ব্যবস্থার অনুরূপ জবাবদিহিতাহীন, এককেন্দ্রিক ও এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক ক্ষমতা কাঠামো।

Ganosamhati Andolon
50 years of liberation

বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে,  সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ কোন প্রতিষ্ঠানই জনগণের পক্ষে কার্য়কর নয়। মানুষের বাক-স্বাধীনতা নাই, জীবনের নিশ্চয়তা নাই। এর প্রধান কারণ এদেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো তথা সংবিধানের ভেতরেই নিহিত। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই রাষ্ট্রে যে সংবিধান প্রণিত হলো তার মূলনীতিতে জনগণের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার একটা স্বীকৃতি থাকলেও তার ক্ষমতা কাঠামোকে তৈরি করা হয়েছে মূলনীতি বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ অনুপোযোগী করে। যেসব আকাঙ্ক্ষা ও অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের আইনী বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি, উল্টো আইন দিয়ে এসব অধিকার সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে মূল ক্ষমতাকাঠামোকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন ক্ষমতাসীনরা সবসময় জবাবদিহিতার উর্ধ্বে থেকে তাদের মর্জিমাফিক সকল প্রকার ক্ষমতা ভোগ করতে পারে। এই সংবিধানে রাষ্ট্র-সরকার-সরকারি দলকে এক এবং একাকার করে ফেলা হয়েছে। রাষ্ট্রের আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমুহকে এক পদ তথা এক ব্যক্তির অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁকে বসানো হয়েছে সংবিধানের উর্ধ্বে এবং রাষ্ট্রে বসবাসকারী সবাইকে আনা হয়েছে তাঁর অধীনে। শান্তিপূর্ণপথে ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্বাচনী পথকে রুদ্ধ করে দিয়ে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত-সহিংসতাকে রাজনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রে মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। 

বন্ধুগণ,
আজ সময় এসেছে আমাদের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাবার; আমরা রাষ্ট্রকে কোন পথে চালিত করতে চাই তার দিক নির্দেশনা তৈরি করার; জনগণের ত্যাগ ও গৌরবের মুক্তিযুদ্ধকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে আনার। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণায় যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যার ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে সেটাই হলো আমাদের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলানোর নিক্তি বা মানদণ্ড। আগামীর বাংলাদেশকে এই ঘোষণার ভিত্তিতেই আমরা গঠন করতে চাই। 

আমরা চাই লুন্ঠন পাচার বন্ধ করে বাংলাদেশকে একটা উৎপাদনশীল ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে; দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্পকে জাতীয় বিকাশের উপযোগী করে গড়ে তুলতে; ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের নাগরিক ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করতে; সকলের জন্য জাতীয় ন্যূনমত মজুরি এবং কৃষিপণ্যের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করতে; প্রাণ-প্রকৃতি উপযোগী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে। 

কিন্তু বর্তমান সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে এসবের কিছুই করা সম্ভব নয়। তাই দরকার সংবিধান সংস্কারের মধ্য দিয়ে এই অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে সংস্কার করে এর গণতান্ত্রিক রূপান্তর। 

মোটাদাগে যেসব সংস্কার করতে হবে তা হলঃ 

  • রাষ্ট্রের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার পৃথকীকরণ করে তাকে ভারসাম্যপূর্ণ ও জবাবদিহিতামূলক করতে হবে। 
  • সংবিধানের অগণতান্ত্রিক ৭০ ধারা বাতিল করে সংসদ সদস্যদের দলীয় প্রতিনিধির বদলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা পালনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন কাজের দায়িত্ব থেকে সংসদ সদস্যদের পুরোপুরি বিযুক্ত করে তাদের গণতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইন তৈরির কাজে নিয়োজিত করতে হবে। 
  • প্রতিটি প্রশাসনিক স্তরে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ব মুক্ত করে তাদের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধীনস্থ করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ের জননিরাপত্তা, সেবা ও উন্নয়ন কাজের দায়িত্ব দিতে হবে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারকে। জনপ্রতিনিধিরা তাদের প্রতিশ্রুত দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে বা গণবিরোধী হলে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে তাদের প্রত্যাহারের বিধান থাকতে হবে। 
  • জনগণের জন্য একটা ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা কায়েমে সক্ষম করে তুলতে বিদ্যমান সকল গণবিরোধী আইন ও উপনিবেশিক কাঠামো বাতিল করে একটা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উপযোগী আইনী সংস্কার করতে হবে। 
  • জনগণ হবেন সংবিধানের রক্ষাক, তাদের মতামত (গণভোট) ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করা যাবে না। 

বন্ধুগণ,
আমরা জানি এসব সংস্কারের পক্ষে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ঐক্য গড়ে তোলা না গেলে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সেই লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গ্রুপ, সামাজিক সংগঠন, ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাই। আমরা নিজেরাও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে নানা পদক্ষেপ নিতে চাই। মুক্তিযুদ্ধকে লুটেরা, পাচারকারী, মাফিয়া ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের কাজে ব্যবহারের লক্ষে আজ ইতিহাসকে একদলীয় কারাগারে বন্দী করা হয়েছে। আমরা এই মহান জনযুদ্ধের ইতিহাসকে মুক্ত করতে চাই। তাকে জনগণের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করতে চাই। এই লক্ষ্যে, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে, আগামী ১ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোসহ সারাদেশে আমরা ৪ সংগঠন সভা-সমাবেশ-মিটিং মিছিলসহ বিভিন্নভাবে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো। আমাদের বক্তব্যের পক্ষে জনগণকে সংগঠিত করবো, প্রয়োজনে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলবো। 

বন্ধুগণ, 
আমরা বলতে চাই, বর্তমান সরকারের দেশ পরিচালনার কোন নৈতিক অধিকার নেই। জনগণের সাথে প্রতারণা করে জনগণের পয়সায় প্রতিপালিত রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দলের পরিচয়ে পরিচিত মাস্তানদের ব্যবহার করে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স পূরণ করে ভোটের নামে নজিরবিহীন প্রহসন করা হয়েছে। আমরা সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহবান জানাই। সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। পারস্পারিক বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি বর্জন করে সকলের সাথে আইনানুগ ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেওয়াও হবে এই সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সকলের অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তির বাংলাদেশ; বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের বাংলাদেশ; স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের বাংলাদেশ কায়েমের প্রথম শর্তই হচ্ছে সকলের জন্য ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করা। কেবলমাত্র জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই ক্ষমতা পরিবর্তনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের জয় পরাজয় যেন তার নাগরিক হিসাবে মর্যাদা ও অধিকারের ক্ষেত্রে সামান্যতম আঁচড়ও কাটতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রে ন্যূনতম এসব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত অঙ্গীকার।

মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ৪ সংগঠনের গৃহীত আংশিক কর্মসূচি: 

১. ১ মার্চ, মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা, জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটোরিয়াম, বেলা ১১টা 

২. ১২ মার্চ, সুবর্ণ জয়ন্তী সমাবেশ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বিকাল ৩টা

৩. ২৬ মার্চ, স্ব স্ব সংগঠনের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবস পালন

৪. ১০ এপ্রিল, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিবস পালন।

এছাড়াও দেশব্যাপী বছরজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হবে, তা যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
সর্বশেষে, আবারও আমরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকার ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার’-এর নীতিতে একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের কাজে ভূমিকা নেয়ার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই। 

ভাসানী অনুসারী পরিষদ; ছাত্র,যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ;  গণসংহতি আন্দোলন ও রাষ্ট্রচিন্তা’র পক্ষে শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, নুরুল হক নুর, জোনায়েদ সাকি  ও হাসনাত কাইয়ুম 

Leave a Reply