আজ ০৭ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার, বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক আন্দোলনের নেতা নূরুল ইসলাম ও ওলিয়ার রহমানকে মধ্যরাতে সাদা পোশাকে গ্রেফতার, পরিবারকে হদিস না দেয়াা এবং দুইদিন পরে আজ মিথ্যা মামলা দিয়ে কোর্টে প্রেরণ করার প্রতিবাদে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবলে, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, সম্পাদকমÐলীর সদস্য বাচ্চু ভ‚ইয়া, মনিরুদ্দীন পাপ্পু, জুলহাসনাইন বাবুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বিক্ষোভ সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, এই করোনাকালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটগুলো বন্ধ করে প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিক এবং আরো ২৫ হাজার বদলী শ্রমিককে কর্মহীন করার নিষ্ঠুর খেলায় মেতে উঠেছে। সরকার বলছে লোকশান হচ্ছে। মিলগুলো খোলা থাকলে প্রতি বছর ২শ কোটি টাকা লোকশান হয়। অথচ আমরা দেখছি এই সরকারের আমলেই ৪৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ মওকুফ করা হয়েছে। ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। অথচ বিজেএমসি ও মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি ও ভুলনীতির কারণে যে লোকশান হচ্ছে তার দায় নিষ্ঠুরভাবে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে শ্রমিকদের ওপর। জোনায়েদ সাকি বলেন, এই খেলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
জোনায়েদ সাকি আরো বলেন, এই সরকার অগণতান্ত্রিকভাবে, মানুষের ভোট ছাড়া, ম্যান্ডেট ছাড়া পুলিশ ও প্রশাসনের ক্ষমতা ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। ফলে জনগণ ঐক্যবন্ধ হলেই, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই, তাকে আর সহ্য করতে পারছেনা। ফেসবুকে স্টেটাস দেখলে, একটি কার্টুন তৈরি করলে বা সরকার বিরোধী কথা বললেই মাথা গরম হয়ে যায়। রাতের আঁধারে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে আসা হচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে জেলে পোড়া হচ্ছে। একই ঘটনা ঘটলো খুলনার শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক পাটকল রক্ষা যুব জোটের উপদেষ্টা এবং প্লাটিনাম জুবিলী জুটমিলের শ্রমিক নূরুল ইসলাম এবং ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিক ও পাটকল রক্ষা যুব জোটের আহŸায়ক ওলিয়ার রহমানকে গত ৫ জুলাই মধ্য রাতে তাদের বাড়ি তেকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে এসে দুইদিন আটকে রেখে আজ তাদের কোর্টে তোলা হয়েছে। যারা পাটকল রক্ষার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে চাইছে তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্যই নূরুল ইসলাম এবং ওলিয়ার রহমানকে অবৈধ কায়দায় আটক করা হয়েছে। জোনায়েদ সাকি আরো বলেন, সরকার যেহেতু নিজে ভয় পায়, ফলে ভয় দেখিয়ে, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নিজেদের ভয় ঢাকতে চায়। যারা ত্রাস সৃষ্টি করে, তারাই সন্ত্রাসী। জনরোষে ভীত হয়ে সরকার রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সরকার অনতিবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দেয়ার দাবি করেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সংহতি বক্তব্যে বলেন, ১২শ কোটি টাকা লোকশান দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। পিপিপি-র নামে প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলগুলোর প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ভূমি এবং যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা মিলে আরো প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ সরকারের ঘনিষ্টজনরা দখল করার ষড়যন্ত্র করছে। অন্যদিকে জনগণের সম্পদ এ পাটকলগুলো যারা রক্ষা করার জন্য সংগ্রাম করছেন, সেই নূরুল ইসলাম ও ওলিয়ার রহমানদের রাতের আঁধারে গ্রেফতার করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে আন্দোলনকারীদের ভয় দেখাতে চাইছে। পাটকল রক্ষার আন্দোলনের প্রতি তাঁর দলের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন।
আবুল হাসান রুবেল বলেন, সরকার আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। দুর্নীতি লুটপাটে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্যখাতে মিঠু সিন্ডিকেট একাই ৯শ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে। এই এক দুর্নীতির টাকা উদ্ধার করতে পারলেই রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন করা সম্ভব। কিন্তু সরকার ও তাদের পোস্যরা একেবারে এগুলো গিলে খাওয়ার চক্রান্ত করছে। এর বিরুদ্ধে কথা বলাতেই নূরুল ইসলাম ও ওলিয়ার রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে মধ্য রাতে। তিনি অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নিশর্ত মুক্তি দাবি করেন।