২৪ মার্চ ২০২০ তারিখের প্রেস বিজ্ঞপ্তি
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধে ‘জরূরি অবস্থা ঘোষণা’ সংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝি প্রসঙ্গে:
গত ২০ মার্চ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল এক যুক্ত বিবৃতিতে সরকারের প্রতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য যে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার আহবান জানিয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গে আমরা কিছু ব্যাখ্যা প্রদান করতে চাই সম্ভাব্য ভুল বোঝাবুঝি নিরসনে।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি এবং বাংলাদেশেও এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে সরকারের সমস্ত কর্মকাণ্ডকে এই সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়োজিত করার আহ্বান জানানো হয়েছিলো। কিন্তু এই ‘জরুরি অবস্থা বাংলাদেশের সংবিধানের নবম(ক) ভাগের ১৪১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত যুদ্ধ, বহি:আক্রমণ কিংবা অভ্যন্তরীন গোলযোগের জন্য যে জরুরি অবস্থার কথা বলা আছে সেটাকে বোঝানো হয়নি। মূলত জনস্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিশেষ জরুরি অবস্থার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যগত বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ না করায় এক্ষেত্রে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এবং বিষয়টিকে অনেকে রাজনৈতিক কারণে সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে ‘ জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধান’ সে অনুযায়ী পাঠ করেছেন। এই বিধান অনুযায়ী ‘ জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করলে জনগণের মৌলিক অধিকার স্থগিত হয়ে যায়। গণসংহতি আন্দোলনও মনে করে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা জনগণের জন্য নতুন বিপদের কারণ ঘটাবে। আমাদের সেদিনের পাঠানো বিবৃতি পাঠ করলে কিংবা এ বিষয়ে দলের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির ভিডিওবার্তাটি শুনলে বরং বোঝা যাবে, জরুরি অবস্থা বলতে যা যা দাবি করা হয়েছে, সেগুলো সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদগুলোর বিপরীতমুখী। বরং গণসংহতি আন্দোলনের দাবি ২০১৮ সালে প্রণীত ‘জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবেলায়’ সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন এবং ২০১২ সালের ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন’-এর ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণার সাথেই সঙ্গতিপূর্ণ।
বাংলাদেশে শাসকরা সর্বদা জনগণের অধিকার হরণের জন্যই জরুরি অবস্থা ব্যবহার করেছে, সেই কারণেই আমাদের অবস্থান, বক্তব্য ও করণীয় স্পষ্ট থাকবার পরও ‘জরুরি অবস্থা’ শব্দটির ব্যবহারই সচেতন নাগরিকদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির জন্য যথেষ্ট। আমরা বিষয়টি উপলদ্ধি করছি। একই সাথে আমরা সংবিধানের এই ক্ষমতাকে একচ্ছত্রকরণের অভিসন্ধিমূলক জরুরি অবস্থা বিষয়ক অনুচ্ছেদগুলোর বিরুদ্ধে অতীতের মতই ভবিষ্যতেও আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম অটুট রাখবার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব-নীতি কার্যকর (লকডাউন) করাসহ আমাদের দাবি সমূহ নিম্নরূপ:
১. বিদেশ থেকে আগত সকলকে শতভাগ পরীক্ষা করতে হবে এবং কাউন্সিলিং করে কোয়ারেন্টাইনে রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
২. অবিলম্বে সর্বধিক সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য দেশী-বিদেশী উৎস থেকে প্রয়োজনীয় কিটস সংগ্রহ করতে হবে। দেশের সমস্ত হাসপাতালগুলোকে পর্যায়ক্রমে দ্রুত করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। কোথাও আক্রান্ত সন্দেহে কেউ ফোন করলে যাতে হাসপাতাল থেকে টিম গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে পারে। রোগীরা নিজে থেকে হাসপাতালে যেতে শুরু করলে তাতে সংক্রমণের বিস্তার আরো বাড়তে পারে। পাশাপশি করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরী করা দরকার। বিভিন্ন এরাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে এই ধরেণের হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমান আইসিইউ নেই, দ্রুততম সময়ে কি বন্দোবস্ত করা যায়, সেটারও উদ্যোগ নিতে হবে।
৩. একইসাথে ডাক্তার ও নার্সদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে জরুরি কাজে নিযুক্ত সকলের জন্যই প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. বিশেষভাবে জরুরি বিষয় হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। গার্মেন্টসহ শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হলে বিশেষ অবস্থাকালীন সময়ে শ্রমিকদের বেতনের নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে। শিল্প কলকারখানাকে বিনাসুদে ঋণ দিতে হবে যাতে তারা যে অর্থনৈতিক সংকট আসছে সেটাকে মোকাবেলা করতে পারে। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে কর্মরত শ্রমজীবী মানুষ অর্থ্যাৎ স্বনিয়োজিত শ্রমিক যারা আছেন তাদের বিনামূল্যে খাদ্য ও স্বল্পদামে বা রেশন আকারে আবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় মূল্যের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য সরকারকে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫. সরকার যেন তথ্য গোপন না করে, ইতিমধ্যেই কিছুটা বিলম্ব হয়ে গেলেও বাস্তবতা কী সেটা জনগণের সামনে পরিস্কার জানায়। ইউরোপের বহু দেশও স্বীকার করেছে যে তারা দেরিতে সাড়া দিয়েছে, কিন্তু সেটা স্বীকার করেই তারা অবিলম্বে একটা সামাজিক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বার মতই করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। তথ্য গোপন করলে একদিকে বিপদ বাড়বে, অন্যদিকে গুজবের জন্ম হবে যা এই পরিস্থিতিতে আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
৬. জেলখানা, রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. এছাড়া ডেঙ্গুর প্রকোপ নিরসনেও সমান্তরাল উদ্যোগ থাকতে হবে।
বার্তা প্রেরক
বাচ্চু ভূইয়া
দপ্তর বিষয়ক উপকমিটি,
গণসংহতি আন্দোলন