আজীবন মুক্তিসংগ্রামী, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সংগ্রামী সভাপতি, খুলনা অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আতিউল ইসলাম গত ২২ অক্টোবর ২০২০ রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৭৭ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান নেতা করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
বাবার সরকারি চাকুরির সুবাদে পড়াশোনা শুরু হয়েছিল খুলনা জেলা স্কুলে এবং বিএল কলেজে। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে পড়াকালীন সময়ে ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। মোনায়েম খান বিরোধী লড়াইয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে গিয়ে মামলায় পড়াশোনা আর শেষ করা হয়নি। ১৯৬৪ সালে খুলনায় ‘শ্রমিক কর্মী সংঘে’ সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। শ্রমিক আন্দোলনের আরেক কিংবদন্তি নেতা ডা: সাইফ-উদ-দাহার ও শাহ আতিউল ইসলাম মিলে খুলনার পাটকলগুলোর শ্রমিকদের মধ্যে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তখন থেকেই ডা: সাইফ-উদ-দাহারের সাথে মিলে সারাদেশে শ্রমিকদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রতিষ্ঠা, আইয়ুব শাহির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন শাহ আতিউল ইসলাম।
বৃহত্তর মুক্তি সংগ্রামের জন্য গঠন করেছিলেন ‘কমিউনিস্ট কর্মী সংঘ’।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ‘কমিউনিষ্ট কর্মী সংঘের’ নেতাকর্মীরা দেশের ভিতরেই খুলনা যশোরের শার্শা, নাভারন, দেওহাটা, ঝিকরগাছা নড়াইলে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ লড়াই লড়েছিলেন। শাহ আতিউল ইসলাম মুক্তির সংগ্রামের সেই লড়াইয়েও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে শ্রমিক ও কমিউনিস্ট আন্দোলন ছত্রখান হয়ে গেলেও আজীবন সংগ্রামী শ্রমিক নেতা শাহ আতিউল ইসলাম ১৯৭৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৭৮ সালে ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) গঠনের জন্য নেতৃত্বে ছিলেন, তিনি তার যুগ্ম সম্পাদক হয়েছিলেন। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) গঠনের জন্য নেতৃত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেই দ্বায়িত্বে ছিলেন।শাহ আতিউল ইসলাম ছিলেন সেই শ্রদ্ধাভাজন অগ্রজদের অন্যতম, যারা সারাজীবন সমাজ পরিবর্তনের সপ্ন ও লড়াই সংগ্রামের অবিচল থেকেছেন। শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের স্বার্থের সাথে কখনোই প্রতারণা করেননি।
পাকিস্তানের আইয়ুব আমল থেকে শুরু করে সকল সরকারি আমলেই মামলা নির্যাতনের প্রতিকূলতা ঠেলেই শ্রমিকদের সংগঠিত করার চেষ্টা গড়ে গেছেন। আজকের দিনেও খুলনার পাটকলগুলোতে গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে পাট শ্রমিকরা তুমূল নির্যাতন সহ্য করে লড়ে যাচ্ছেন তাঁরা শাহ আতিউল ইসলামদেরই স্বর্নালী উত্তরাধিকার। বিদায় আতিউল ভাই! আপনি বেঁচে থাকবেন শ্রমিক মেহনতি মানুষের স্বার্থের লড়াইয়ে, মূক্তিযুদ্ধের আকাংখার বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংগ্রামে!