খুলনায় একজন চিকিৎসককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। মর্মান্তিক ও নৃশংস একটা মনোবৃত্তি চারিদিকে।
যে কোন হত্যাকাণ্ডের ন্যায্য বিচার দাবি করি, কিন্তু চিকিৎসকের নিরাপত্তা দাবি করা জরুরিতর একটি কাজ।
চিকিৎসক নির্ভয়ে রোগীকে সেবা দেবেন,এইটুকু আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি। একই সাথে, রোগীর কোন অভিযোগ থাকলে সেটা নিষ্পত্তির কোন নির্ভরতার স্থলও বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ নির্মাণ করতে সক্ষম হননি।
খুনের বিচার দাবি করবার পাশাপাশি এই প্রসঙ্গটা তোলা অস্বস্তিকর। খুন করবার, শারিরীক হামলা করবার কোন গ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারে না, কোন ন্যায্যতা প্রতিপাদন চলে না। পুলিশে ওপরও তো মানুষের বহু ক্ষোভ থাকতে পারে, তাদের ওপর তো এমন হামলা হয় না। সেখানেও তো কার্যত কোন ক্ষোভ নিষ্পত্তির গ্রহণযোগ্য সুযোগ নাই। পুলিশের বিরুদ্ধে যে কোন তদন্তও পুলিশই করে এবং তাতে প্রায় সবাংশে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হন। আমলাতন্ত্রের বিষয়েও তাই।
তাহলে চিকিৎসকরা কেন এমন অনিরাপদ থাকবেন? কারণ পুলিশ কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মত তাদের লাঠির জোর নাই। কিন্তু তাদের মতই কিংবা আরও বেশি বেশি তাদেরকে গণমানুষের সংস্পর্শে থাকতে হয়। হামলাকারীরা প্রায়ই দেখা যায় দলে ভারী, স্থানীয় ক্ষমতাকাঠামোর সাথে তারা সম্পর্কিত। এমনকি কি একটা অদ্ভুদ কারণে প্রকৌশলী ও চিকিৎসকরা ততটা সংঘবদ্ধও নন। খুনের মত ঘটনাও দ্রুতই তারা বিস্মৃত হন, গাজীপুর ভুলে যেতে বেশি সময় লাগলো না। মাস খানেক আগে সাতক্ষীরায় ওষুধ ব্যবাসয়ীর চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় সিভিল সার্জন কার্যত ওষুধ ব্যবসায়ীর পক্ষেই কথা বলেছেন। এই রকম ছেড়ে দেয়া পুলিশ কিংবা জনপ্রশাসনে কল্পনাতীত। চিকিৎসক পেটানো যায় ক্ষমতা থাকলে, এটা এখন দেশজুড়ে একটা গ্রহণযোগ্য ধারণা।
যে চাপটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবী হিসেবে তারা প্রয়োগ করতে পারতেন আইনী কর্তৃপক্ষগুলোর ওপর, কিসের কিসের অভাবে সেই শক্তিটা তারা হারিয়েছেন, সেটা ভাবতে বসতে হবে তাদের।
মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আবারো দাবি করছি। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস, চিকিৎসক ও শিক্ষক সমাজ স্রেফ নিজেদের পেশাগত দাবিগুলোই জোড়েসোরে তুলতে থাকলে, ভয়ভীতি উ্পেক্ষা করেই জোরদার করতে থাকলে দেশজুড়ে যে ভয়াবহ অগণতন্ত্র চলছে, যে জবাবদিহিতাহীন লুণ্ঠনের শাসন চলছে, এবং তার ফলে পেশাজীবী হিসেবে তারা আরও কোনঠাসা হচ্ছেন– সেটার বিরুদ্ধে প্রধানতম প্রতিরোধের উৎস হতে পারেন।
ফিরোজ আহমেদ
সদস্য,রাজনৈতিক পরিষদ
গণসংহতি আন্দোলন