আজ ১ জুলাই ২০২০, বুধবার, দুপুর ১২:৩০ এ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল, পাট খাতের অবহেলা, অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি পুনর্স্থপন করে রাষ্ট্রীয় পাটকলসমূহ চালু করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপ্রতিত্ব করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, কেন্দ্রীয় সদস্য এ্যাডভোকেট জান্নাতুল মারিয়ম তানিয়া। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক আলিফ দেওয়ান।
সমাবেশে জোয়েদ সাকি বলেন, এই করোনাকালে রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকল বন্ধ করে ৫০ হাজার শ্রমিককে কর্মহীন করা এবং লক্ষাধিক মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দেয় এই সরকারের চরম নিষ্ঠুরতার বহিঃপ্রকাশ। একদিকে ৮/১০ লক্ষ গার্মেন্ট শ্রমিক চাকরি হারানোর শংকায় আছে, প্রায় ৩ কোটি লোক নতুন করে দারিদ্রসীমায় নেমে এসেছে, তখন পাটকল শ্রমিক ও ঐ অঞ্চলের মানুষদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়া কোন ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।
তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রায়াত্ত ২৬ টি পাটকল আধুনিকায়ন করার জন্য প্রয়োজন ১২শ কোটি টাকা। সেই টাকা না দিয়ে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিলো ২০০২ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আদমজী জুটমিলে। আধুনিকায়নের জন্য দরকার ছিলো ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু তৎকালিন সরকার বিশ^ব্যাংকের পরামার্শে ১৩শ কোটি টাকা খরচ করেছিল কারখানা বন্ধ করার জন্য। তিনি বলেন লোকশানের প্রধান কারণ দুর্নীতি, কারখানাগুলো আধুনিকায়ন না করা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি না হওয়া। সেটার সমাধান না করে কারখানা বন্ধ না করা কোন সমাধান নয়। সরকার কি আমলাতন্ত্রের দুর্নীতি বন্ধ করতে পেরেছে? প্রতিটি নিয়োগে, প্রতিটি বদলীতে, প্রতিটি পদন্নতিতে যে দুর্নীতি হয় তা কি বন্ধ করতে পেরেছেন? তাহলে তো সরককেই বন্ধ করে দিতে হয়। সুতরাং দুর্নীতির দোহাই দিয়ে সব দায় শ্রমিকের ওপর চাপানো চলবে না।সমাবেশে জোনায়েদ সাকি আরো বলেন, করোনা মহামারী আমাদের দেখিয়ে দিলো পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন করলে প্রকৃতি কিভাবে তার প্রতিশোধ নেয়। সমুদ্রের তলদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন টন বর্জ জমা হয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ সারা দুনিয়াকেই প্রায় অচল করে দিয়েছে। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে সারা দুনিয়া যখন পাটপণ্য নিয়ে ভাবছে তখন আমাদের সরকারগুলো সেগলো বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এটা শুধুমাত্র বোকামী নয় বরং আত্মধ্বংসী সিদ্ধান্ত। সরকার ২০১০ সালে পাট পণ্য ব্যবহারে প্যাকেজিং আইন করেছিলো। কিন্তু তার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নাই। এই আইন বাস্তবায়ন করলে সারা দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদাই অনেক বেড়ে যাবে। পাট পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলেও রাষ্ট্রায়ত্ব পাট কলের প্রয়োজন আছে।
তিনি আরো বলেন রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করে, লুট করে নিজেদের পকেটে ভরা, বিদেশে পাচার করার যে আয়োজন তা পাটকলের শ্রমিকরা মানবেনা, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মানবে, এই সিদ্ধন্ত থেকে সরে না আসলে এর দাঁত ভাঙা জবাব দেয়া হবে।
সমাবেশে নির্বাহনী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত যতগুলো পিপিপি এর আওতায় প্রকল্প করেছে তার সবগুলোতেই জনগণের সম্পদ সরকারী বিনিয়োগে ব্যক্তির দখলে নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে যে শত শত একর জামি, অবকাঠামো, মেশিনপত্র রয়েছে সেগুলোকে দখল ও লুটকরার মনোস্কামনা থেকেই এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। করোনাকালে এই নগ্ন লুটের আয়োজন কোনভাইে বরদাস্ত করা হবে না। তিনি পাট শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বার্তা প্রেরক
বাচ্চু ভূঁইয়া
কেন্দ্রীয় দপ্তর উপকমিটি
গণসংহতি আন্দোলন
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি