যতটুকু মনে পড়ছে নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে প্রথম সতর্ক বার্তা পাই ভারতের বিশিষ্ট সমাজতাত্ত্বিক আশিষ নন্দীর মুখে ।সম্ভবত তখনও গুজরাত গনহত্যাও হয়নি। কি কারনে বা উপলক্ষে আশিষ নন্দী এক ইন্টারভিউ নিতে মুখোমুখি হয়েছিলেন আজকের ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মাননীয় নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর ।পরে লিখেছিলেন,নরেন্দ্র মোদী রাজনীতিতে বহুদুর যেতে পারেন। কিন্তু লোকটির মধ্যে এক ধরনের ফ্যাসিবাদী প্রবনতা ও লক্ষন আছে যা আগামী দিনে গনতন্ত্রের পক্ষে হুমকি হতে পারে ।
ব্যাক্তি আমি নরেন্দ্র মোদীর পরিচয় পাই গোধরা পরবর্তী গনহত্যা নিয়ে ডকুমেন্টারি করতে গিয়ে । সাধারন মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভ বাদ দিলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন প্রবীন গান্ধীবাদী অধ্যাপক এ এন পাঠক। সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় মোদী শাসনের ফ্যাসিবাদী প্রবনতা নিয়ে খোলাখুলি সমালোচনা করেছিলেন। বলেছিলেন গুজরাত গনহত্যা সংঘপরিবারের নীল নকশা। যার মধ্যে দিয়ে হিন্দু ভোট সংহত করে ক্ষমতায় আসাই বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য । পাঠক সাহেব আরো অভিযোগ করেছিলেন যে এর জন্য দায়ী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং । তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই নাকি পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে পুলিশ প্রশাসনকে অকেজো করে সংঘী গুন্ডাদের কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালায়।
পাঠক সাহেবের ইন্টারভিউ নেবার প্রেক্ষিতটাও একটু বলে নিই । তখন গনহত্যা বিধ্বস্ত গুজরাতে হন্যে হয়ে বুদ্ধিজীবি খুঁজছি যদি কেউ এক লাইন দুলাইন কিছু বলেন ঘটনা সম্পর্কে । যদি সত্যি জানান কি কি ঘটেছিল ২৭ফেব্রুয়ারি রাত থেকে দীর্ঘ সময় । বিশ্বাস করুন একজনকেও পাইনি যিনি সাহস করে ক্যামেরার সামনে মুখ খোলেন । একটা সর্বগ্রাসী ভয় সারা গুজরাত কে কোন এক অজ্ঞাত কারনে যেন ঘিরে রেখেছিল । এমনকি সবরমতী গান্ধী আশ্রমও তখন ছিল তালা দেওয়া। কর্মকর্তারা রহস্য জনক কারনে গা ঢাকা দিয়েছিলেন । অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অতি বৃদ্ধ পাঠক জী কে পেয়েছিলাম । ইন্টারভিউ হয়ে গেলে জিজ্ঞেস করলাম আপনি যে এমন সব চাঁচাছোলা বল্লেন,ভয় করছে না! জানাজানি হলে বিপদে পড়তে পারেন তো ।হো হো করে হেসে বৃদ্ধ অধ্যাপক বলেছিলেন,বেটা নব্বই বছরের কাছাকাছি বয়েস । গান্ধীজী বলতেন যা সত্যি তা বলতেই হবে। যতই বিপদ হোক। আমি গান্ধীমহারাজে চেলা ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলেতো ধর্মচ্যুত হব। তাছাড়া আজ আছি কাল নেই । প্রানের ভয় করিনা ।
তারপর কত বছর কেটে গেছে। এখনও নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে কোন কথা উঠলেই প্রবীন সেই গান্ধীভক্তের মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে । আর ভেসে ওঠে গনহত্যার টুকরো টুকরো নানা দৃশ্য। সেদিনের গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী আজ ঘটনাচক্রে দেশের প্রধানমন্ত্রী । হিন্দু হ্রিদয় সম্রাট ।ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্বন্ধে কিছু বলব না। ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোন বিরোধ নেই । আমরা বিরোধিতা করি হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির । যে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি পুরোপুরি মনুবাদী রাজনীতি । যেখানে দলিত আদিবাসী সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের কোন জায়গা নেই। আমরা বিরোধিতা করছি সাম্প্রদায়িক মেরুকরনের।
অদ্ভুত এক কথা ইদানিং কানে আসছে যে গণতান্ত্রিক ভাবে ভোটে জিতে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী । এই যুক্তিতে কোন দেশের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া যাবে না। এই কুযুক্তির যারা মাথা তাদের পরামর্শ দেব নতুন করে একদা স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় কিভাবে ফ্যাসিস্ট ফ্রাঙ্কোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ব্রিগেড রাস্তায় রাস্তায় প্রতিরোধ আন্দোলন চালিয়ে ছিলেন সেই ইতিহাস আর একবার পড়ে নিতে। তাও ইচ্ছে না করলে নতুন করে ইবসেনের এনিমি অব দ্য পিপল নাটক দেখতে। যা সংখ্যায় বেশি সেটাই সবসময় সঠিক এটা মোটেও ঠিক নয়। ফ্যাসিবাদী রাজনীতির যেমন নির্দিষ্ট কোন ভুগোল নেই। ঠিক তেমনি তাকে পাল্টা প্রতিরোধও করতে হবে আন্তর্জাতিক স্তরেই। ঠিক সেরকমই পৃথিবীর যে প্রান্তেই এদেশের বর্তমান শাসকেরা যাচ্ছেন সেখানেই বিক্ষোভ হচ্ছে । আমেরিকা ইওরোপের সর্বত্রই । এই হওয়াটাই স্বাভাবিক ও ন্যায়সঙ্গত ।