লেখক ও অনুবাদক গৌরাঙ্গ হালদার সরকারের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি পেশায় একজন ড্রাইভার। মহামারীতে চাকরি হারিয়েছি এক বছর আগে। অনেক চেষ্টা করেও এ পর্যন্ত উপযুক্ত চাকরি পাইনি। সঞ্চয় শেষ। এখন বাসাভাড়া দিতে পারছি না। খাবারের সংস্থান আর সন্তানের পড়ালেখাও অনিশ্চিত। নাগরিক হিসেবে সরকারের কাছ থেকে কোনও ভাতা পাচ্ছি না। বরং সরকারী সিদ্ধান্ত দিনকে দিন আমার জীবিকার উপায়কে আরও কঠিন করে তুলছে। বাইকে যাত্রী বহন করে টিকে থাকার চেষ্টা করছিলাম। ‘লকডাউন’-এ তাও এখন বন্ধ। আমাদের বেঁচে থাকার উপায় কী? অবিলম্বে নাগরিক সুরক্ষার সরকারি ভাতা/বরাদ্দ/রেশন চাই।”
যখন কোন নাগরিক উপায় না পেয়ে রাষ্ট্র বা সরকারের কাছে খাদ্যের আবেদন করে পাবেন না সেইটা কোন সভ্য রাষ্ট্র বা সমাজ হতে পারে না। এই রাষ্টের প্রস্তাবনায় খাদ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। নাগরিকবৃন্দের খাদ্যের নিশ্চতা প্রদান করেই এই রাষ্ট্র জনগণের সম্মতি আদায় করেছে। যারা বলবেন রাষ্ট্র এতো টাকা কোথায় পাবে? তারা দুইবার ভাবুন। অপ্রকাশিত লুটপাটের কথা বাদ দিলাম। পত্রিকায় প্রকাশিত যে পরিমান লুটপাট, দূর্নীতি, কর মওকুফের খবর বেরিয়েছে তাতে পাঁচ হাজার টাকার খাদ্য ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা দেয়াটা আহামারি কোন ঘটনা না। একাধিকবার দেয়া যাবে। আসলেই এই টাকা আহামারি কোন ঘটনা না।
লকডাউনে মানুষের জীবন জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের ঘরে খাবার নেই। মানুষের ঘরে খাবার না থাকলে লকডাউন কার্যকর হবে কীভাবে? মানুষ না খেয়ে ঘরে বসে থাকবে? মানুষজন কি এখন চুরি করে খাবে? নাকি লুটপাট করবে? সরকারের বক্তব্য কি?আপনারা রিকশা উলাটায়ে দিচ্ছেন কেন? অফিস কারখানা খোলা রেখে রিকশাওয়ালাদের পুলিশ পেটাচ্ছে কেন? ভ্যাট-টাক্সের টাকায় প্রধানমন্ত্রী থেকে সরকারি পিয়ন বেতন ভাতা নিচ্ছেন তারা বিগত এক বছরে কেন আপদকালীন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারলেন না? এই রাষ্ট্র পোষার টাকা জনগণ কেন দেবে?
আজ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে “নাগরিক প্রতীকী অবস্থানে” জোনায়েদ সাকি মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য ও নগদ অর্থ পৌছে দেয়ার দাবি করেছেন। দাবিটির সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। তিনি সক্রমন রোধে বিশেষজ্ঞ মতামতকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে লকডাউনে “বিশেষ পরিস্থিতি” বিবেচনায় নেয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন।
(জোনায়েদ সাকির বক্তব্যটি শুনতে উপরের লিখায় ক্লিক করুন)
সরকার “বিশেষ পরিস্থিতি” কিভাবে মোকাবিলা করছে?
এই লকডাউনে বিপুল কর রেয়াত, সরকারি খাসজমি প্রদান করা এস আলম গ্রুপের শ্রমিকদের পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। ভয়াবহ সক্রমনের আশংকায় লকডাউন চলাকালে শ্রমঘন গার্মেন্ট কারখানা খোলা। শ্রমিদের স্বাস্থঝুকি নেই? ব্যংক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনকালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ৫০ লক্ষ টাকা দেয়া হবে। খুব ভালো কথা। ঝুঁকিভাতা তো থাকাই দরকার। জানা দরকার সম্ভাব্য আক্রান্ত শ্রমিক ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের মৃত্যুর পর তাদের কে কীভাবে ক্ষতিপূরণ বা ঝুঁকিভাতা দেবে? সরকার কি কোন দায়িত্ব নেবে না? কেন নেবে না?
সরকারের আর্থিক দায়িত্বের আগে মানুষের জান ও মালের সুরক্ষা দিতে হবে। আমাদের ব্যাংক কর্মকর্তারাও নিশ্চয় প্রাণের বিনিময়ে ৫০ লক্ষ টাকা চাইবেন না। আমরা কেন আমাদের জনগণকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবো?
ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরিকে হাসপাতাল করতে দেয়া হলো না। আমরা গতবছর সংবাদে জেনেছি বসুন্ধরায় কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল তৈরী হবে। সেই হাসপাতাল কোথায়? সরকার যে সংক্রমণ ঝুঁকির কথা বলেছে তাতে তো প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হওয়ার কথা। যদি বিপুল পরিমাণ আক্রান্ত হয় তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা কি? ক্ষমতাবানরা যেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না সেখানে জনসাধারণ চিকিৎসা পাবে এটা কাকে বিশ্বাস করতে বলেন? চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে লকডাউন আরোপ করলে সেটি কার্যকর হবে না বরং জনগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে এটাই স্বাভাবিক।
এই আপদকালীন সময়ে সরকারের প্রতি প্রস্তাবনা এই যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া এই লকডাউন জনগণ মানবে কেন?
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বিগত দশ দিন চিকিৎসার জন্য ঘরের বাহিরে চলাচল করতে হয়েছে। শুধুমাত্র লকডাউনের কারণে দ্বিগুণ অর্থ খরচ করতে হয়েছে আর ভোগান্তি তো আছেই। এবং সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরেও আমার কাছে অনুভূত হয়েছে যে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরও আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা কোন অংশেই কম নয়।
শ্রমিক মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী ব্যবসায়ী কারো পক্ষেই ব্যাপক প্রণোদনা ছাড়া এই লকডাউন মেনে চলা সম্ভব না। এমনকি এভাবে চলতে থাকলে, দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধিসহ নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে।
রাজনৈতিক কর্মী