You are currently viewing বাঁক বদলের ২৫ জানুয়ারি

বাঁক বদলের ২৫ জানুয়ারি

আজ ২৫ জানুয়ারি। ১৯৭৫ সালের এ দিন সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর তিনি ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখ বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) গঠন করেন।

ছবি: ইন্টারনেট থেকে পাওয়া

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে পদক্ষেপ নিয়ে আজকের দিন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়, সেটি হচ্ছে এই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন। এতে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়। জারি হয় একটি দলের চেয়ারম্যান যিনি রাষ্ট্রপতি, আর তার অধীনেই শাসিত সরকার ব্যবস্থা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এ পরিবর্তনে খোদ আওয়ামী লীগের নেতাসহ অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন।

বিবিসি বাংলা’র এক প্রতিবেদন বরাতে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা ডা. এস এ মালেকের এ নিয়ে ভাষ্য জানা যায় যে, “সেই সময়ের পরিস্থিতি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামাল দেয়া সম্ভব ছিল না। সেদিন ‌‘৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন করে সংসদের নির্বাচন দিয়ে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার হলো। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? একদিকে সংসদীয় অবাধ গণতন্ত্র অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ। পাঁচজন সাংসদকে মেরে ফেলে দেয়া হলো। রেল লাইন তুলে ফেলা হলো। এবং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সেখানে তৎপর হলো।” প্রতিবেদনে তিনি আরো বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমার মতে, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সংসদীয় গণতন্ত্র দিয়ে দেশ শাসন করা সম্ভব ছিল না। সেজন্য তিনি বাকশালের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যের কথা বললেন। তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে এগুতে চেয়েছিলেন।”

বিবিসি বাংলা’র প্রতিবেদনে রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর এ প্রসঙ্গে বলেন, “শেখ মুজিবের জন্য তার দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্নীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অন্যদিকে দলের একটি অংশ বেরিয়ে যাওয়ার পর সরকার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিল। তখন বিরোধীদের ওপর নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা নিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে শেখ মুজিব সব ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে বাকশাল গঠন করেন।” বদরুদ্দীন উমর আরো বলেন, “ঐ সময় প্রশাসন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ দল ইত্যাদির মধ্যে একটা ভাঙন তৈরি হয়েছিল। যে ভাঙনটা তথাকথিত আওয়ামী লীগের যে সংগঠন ছিল, সেটা দিয়ে সামাল দেয়া সম্ভব ছিল না। সেখানে তাদের সহমতের দল (সিপিবি, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর), জাতীয় লীগ) অন্যদের নিয়ে একটা সংগঠন করা দরকার ছিল এবং যেটা সামাল দিতে পারে। শেখ মুজিব তা মনে করেছিলেন। সেজন্যই তিনি বাকশাল করেছিলেন।”

বিবিসি বাংলা’র একই প্রতিবেদনে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, “শেখ মুজিবের ক্ষমতা অল্প সময়ের মধ্যেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল। এই যুদ্ধের সময় জনগণের মাঝে আশা আকাঙ্খা যেমন বেড়েছিল, সে রকম জনগণ এটাও বুঝেছিল যে, আবার দরকার হলে আমরা অস্ত্র ধরে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবো। যেটা বামপন্থীরা করেছিল। তার রেজিমকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। উনিতো গণতন্ত্র পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নাই। তার আগেইতো উনার রেজিমকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এই বামরা এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, তারা সেটা করেছিল। সেজন্য এটা করা হয়েছিল। এটা আমার বিশ্লেষণ।”

বদরুদ্দীন উমর বলেন, “বাকশাল ছিল একনায়কতন্ত্র, সেজন্য মানুষ তা গ্রহণ করেনি। বাকশাল গঠনের পরে দেশের ওপর ফ্যাসিস্ট জুলুম আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। সব দলকে বন্ধ করে দিয়ে, নিষিদ্ধ করে দিয়ে, সব খবরের কাগজ নিষিদ্ধ করে দিয়ে লোকজনকে ধরপাকড় করে ব্যাপকভাবে জুলুম করেছিলেন। কৃষক শ্রমিকের সাথে বাকশালের কোনো সম্পর্ক ছিল না।” প্রতিবেদনে তিনি আরো বলেন, “এটা কি সহজ জিনিস নাকি সমস্ত সংবাদপত্র বন্ধ করে দিলাম। হাজার হাজার লোককে জেলে দিলাম। এটা কি খেলনা জিনিস? সেজন্যই লোকে মনে রাখে এবং সমালোচনা করে।”

তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশালকে দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।

সাংবাদিক ও নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির তার ১৭ মার্চ ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘Mujib’s thoughts on oppositionalism while in opposition’ নিবন্ধে লেখেন,

“SHEIKH Mujibur Rahman, who was arrested by the Pakistan authorities a few hours before the commencement of Bangladesh’s liberation war against the occupation forces of Pakistan on March 25, 1971, returned to the liberated country on January 10, 1972. He was given a hero’s reception that Bangladesh had ever seen while his ‘national’ popularity those days was matchless with that of anyone in Bangladesh and beyond. The successful national war of liberation was fought under his name. The founding president of the newly emerged country, the Sheikh took the rein of power the next day. However, he was brutally assassinated, along with most members of his family, in less than four years of his ascendency to power. In between, Bangladesh had unfortunately experienced almost everything that the Sheikh had fought against in the long years of his oppositional political life.”

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ২৫ জানুয়ারি অবিস্মরণীয় দিন। এ থেকে শেখার আছে হয়তো অনেক কিছু। নতুন চিন্তায় নতুন পথ দেখাতে পারে এ দিন। আগের ভুলকে শুধরে নিয়েই তো মানুষ প্রজাতি সামনে দিকে পথ চলে। তাই এই ২৫ জানুয়ারির এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হওয়া অত্যন্ত জরুরী।

হাসান শাওন, লেখক, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা।

#উম-১/১

Leave a Reply