১. কায়েমী স্বার্থে পরিবারতন্ত্র চালু করার উদ্দেশ্যে ব্যাংক কোম্পানী আইন পালটিয়ে একই পরিবারের চারজন এবং বিভিন্ন মেয়াদে নয় বছর পর্যন্ত পরিচালক থাকার বিধান রাখা হয়েছিলো। এর মাধ্যমে আসলে ব্যাংকের পরিচালকদের যা ইচ্ছে তাই করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং কার্যত ব্যাংক খাতে জমিদারি প্রথার পুনর্বহাল হয়েছে। ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা ও ব্যাংক পরিচালনার বা সংশ্লিষ্টতার বিবেচনা না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, লুটেরা রাজনৈতিক পরিবারের লোকদের করা হয়েছে পরিচালনা পরিষদের সদস্য। ফলে ইতিমধ্যেই জেঁকে বসা জমিদারি প্রথা একটা রাজনৈতিক জমিদারির জন্ম দিয়েছে।
২. এভাবেই ব্যাংক খাতে চলেছে অবাধ লুটপাট আবার লুটের ফলে ডুবতে বসা ব্যাংকের দুরবস্থার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের অপকীর্তি ও লুটপাট মুছে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হটকারীমূলক সিদ্ধান্তে একীভূতকরণের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংক বলে পরিচিত ব্যাংক গুলোর সাথে মন্দ ব্যাংকগুলোকে জুড়ে দিয়ে লুটপাট লুকানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পুরোটাই আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং লুটেরাগোষ্ঠীর লুণ্ঠন ও অপকর্ম থেকে জনগণের মনোযোগ সড়ানোর কায়দা মাত্র।
৩. ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের আনুষ্ঠানিক পরিমাণ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা বলা হলেও প্রকৃত অবস্থা ধামাচাপা দিতে ঋণ পুন:তফসিলিকরণ, অবলোপন ও খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলে দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতা দখল করে তখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। বর্তমানে পুন:তফশিলকৃত ও অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ মিলে ৪ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন। এ থেকেই বোঝা যায় বর্তমান সরকার ব্যাংক খাতকে কিভাবে লুটপাটের কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
৪. বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের আগের ১৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। পরের দুই বছরে গড়ে প্রতিবছর ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের ২০০৯ সালের ক্ষমতা থেকে এ পর্যন্ত পাচার হয়েছে ১০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি।
৫. কিছুদিন আগে ডেইলি স্টার ‘এস আলমের হাতে আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে এস আলম গ্রুপের সিঙ্গাপুরে ১ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি অর্থ পাচারের খবর প্রকাশ করলেও এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা তো নেওয়া হয়ইনি, বরং আদালতের মাধ্যমে এ বিষয়ে অনুসন্ধান ও বিচারিক প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় নতুন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হয়েছে এস আলম গ্রুপের হাতেই।
৬. সম্প্রতি ব্যাংক খাত নিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তিনটি বৃহৎ ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে দেশের পুরো ব্যাংক ব্যবস্থা ধসে যাবে। এ থেকে বোঝা যায় পুরো ব্যাংক ব্যবস্থাটা আজ গুটিকতক লোকের কুক্ষিগত। অথচ সাধারণ ব্যবসায়ীরা আমাদানীর জন্য নিয়মমাফিক এলসি খুলতে পর্যন্ত পারছেন না। অথচ মাত্র ২০ হাজার টাকা ঋণের দায়ে কৃষকের কোমরে দড়ি বেঁধে জেলে পোড়া হয়।
৭. কতিপয় রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ী-আমলা প্রশাসনের হাতে আজ দেশের সমস্ত জনগণ জিম্মি। এদের লুটপাটের বন্দোবস্ত করতে আজ রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে একটা পরিবারকেন্দ্রিক ভাই বেরাদারের অর্থনীতি চালু করা হয়েছে বাংলাদেশে। দেশের মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের চাপে দিশেহারা, দেশে কর্মসংস্থানের কোন বিকাশ নেই, ডলার সংকটে জর্জরিত দেশ, বৈষম্য দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে, আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এদের লুণ্ঠন পাচারের উৎসব।