আধিকার বিষয়টা অংশগ্রহণের সাথে সম্পর্কিত। অধিকার কেউ কাউকে দেয় না দেয়ার বিষয়ও না। এটা নির্মাণের প্রবল আকাঙ্খার ভেতর দিয়ে নানান ভাঙ্গা গড়ার মধ্যেদিয়ে তৈরি হয়। মানুষ যখন অংশগ্রহণ করে না, নির্লিপ্ত থাকে, তখন অধিকার অনিশ্চিত হয়ে পরে, চারপাশ থেকে হাসঁফাস অবস্থা তৈরি হয়। নাগরিক অধিকার গুলোর ব্যবহারিক ভাষা হয়ে যায় করুন, দয়া, মায়া কিংবা সুযোগ। এতে তাড়াতাড়ি যে কোন উপায়ে কার্যসম্পাদন করতে চায়, ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। অধিকারের ভাষা, মুক্তির রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ভাষা মানুষ হারিয়ে ফেলে। পরাধীনতার এই যে দুষ্টচক্র তাতে প্রতিবাদহীন ভাবে আটকে থাকে। এসব কিছুই কিন্তু রাজনৈতিক বয়ান দিয়েই এই জবরদস্তি ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। সুতরাং মানুষ একারণেই প্রবলভাবে রাজনীতি বিমুখ। সকল সন্ত্রাস জবরদখলের নাম দিয়েছে রাজনীতি। এটা এখন মানুষের সংকট। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশে নাগরিক মর্যাদা নয় অধিকার পাবেন কিনা তা নির্ভর করে আপনার টাকা, রাজনৈতিক বা সামাজিক শক্তির ওপর।
প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি অরাজনৈতিক আদর্শ কি আমাদের মুক্ত করবে? কিংবা অরাজনৈতিক কি রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তা আছে যাকে আদর্শ বলা যায়? এই অরাজনৈতিক কথাটা মূলত বিরাজনৈতিকতা। বিরাজনৈতকতা হচ্ছে রাজনীতি বিমুখতা। এটা একটা অবৈধ ক্ষমতার ছত্রছায়ার জনপ্রিয় ধারণা (হেজিমনি), পরোক্ষভাবে রাজনীতি বিমুখতা নাগরিকের অধিকার সংকুচিত করার রাজনীতি। এটা একটা নন গভর্নমেন্ট নির্ভরতা ভিত্তিক মানসিকতা। সমাজের মধ্যে এমন মনস্তত্ব তৈরি করে যে, নিজের মধ্যেই সবকিছু খুজে পাওয়া কিংবা নিজেকেই সমস্ত সামাজিক অধিকার গুলোর ব্যবস্থা করার দায় অনুভব করা (যা কখনও সম্ভবও না)।
ইতিহাসের কোন অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অরাজনৈতিক ছিল? বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের আগেপরে জনগণের সমস্ত আন্দোলন শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করেছে। সাম্প্রতিক কালের কোঠা সংস্কার, রাষ্ট্র সংস্কার সমস্ত কিছু কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? উত্তর হচ্ছে রাজনৈতিক লড়াইয়ের কাতারে।
প্রবাসীদের অধিকার ভিত্তিক পর্যালোচনা ও বিভিন্ন দাবি দাওয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাছে পৌঁছানো এবং সেসব আদায়ের জন্য তাৎপড়তা চালানো নিশ্চিত ভাবে সমর্থন যোগ্য। এবং এই ধরণের ছোট ছোট বিজয় আমাদের আধিকতর কল্যাণের দিকে নিয়ে যাবে। এই বিজয় শুধুমাত্র প্রবাসীদের বিজয় হলে তা দ্রুত ভেঙে পড়বে। এই বিজয় তখনই বৃহত্তর বিজয় হবে যখন বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের লড়াইয়ের সাথে একাত্মতা করতে পারা যাবে।
কারণ শেষ বেলায় বাংলাদেশ আমাদের ঠিকানা। আমরা বাংলাদেশে জন্মেছি। প্রবাসীদের মর্যাদা কখনো প্রতিষ্ঠিত হবে না, যতক্ষণ না নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রবাসীদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না, যতক্ষণ বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়। প্রবাসীরা শুধুমাত্র অর্থনীতির জ্বালানী হিসাবে থাকতে চায় না। তারা রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ভূমিকা রাখতে চায়।
প্রবাসীদের রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্রমাগত শক্তিশালী করে চলেছে। এটা বাংলাদেশ সরকার, বিশেষ করে বিভিন্ন দেশে যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন তাদের অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রবাসীদের সকল রকম সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হতে হবে।
নাসির জসি , জাতীয় পরিষদ সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন ।
#১১/৫/উৎসব মোসাদ্দেক