You are currently viewing আমাদের ট্রেনিং হলো ভয় না পাওয়া

আমাদের ট্রেনিং হলো ভয় না পাওয়া

বলতে দ্বিধা নাই, ছবিটা আমিই তুলেছি, প্লাকার্ডের হাতের লেখাটাও আমার।

গতকালই কুমিল্লার লাকসামে রিক্সা-ইজিবাইক শ্রমিকদের আন্দোলনের এই ছবি অনেকেই ব্যবহার করেছেন। অনেক গ্রুপে দেখলাম ছবিটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। রিক্সা শ্রমিকদের এই আন্দোলন স্থানীয়ভাবে সংগঠিত করেছে গণসংহতি আন্দোলনের লাকসাম উপজেলার নেতা জহির রায়হান, ফাহাদ ও ছাত্র ফেডারেশনের জাবেদসহ আরো অনেকে। সহযোগিতার জন্য ইমন ভাইয়ের (ইমরাদ জুলকারনাইন, গণসংহতি আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার সমন্বয়কারী) পরামর্শে আমি লাকসাম যাই শনিবার বিকেলে। কর্মসূচী ঘোষণা করা ছিলো আগেই। বিকেলে দ্রুততার সাথে লিফলেট প্রকাশ করা হয়, গণচাঁদা উত্তোলন করা হয়। সন্ধ্যার সময় আন্দোলনের সংগঠক ফাহাদের অফিসে হানা দেয় ডিবি পুলিশ, ফাহাদ তখন আমাদের সাথে ছিলো, ওর বসকে হুমকী দেয়া হয়। একটু পরেই জহির ভাইকে লাকসাম থানার ওসি ফোন দিয়ে থানায় আসতে বলেন। আমাদের তখন শ্রমিকদের সাথে মিটিং করার কথা ছিলো। আমরা মিটিং স্থগিত করে থানায় যাই। থানাতেই প্রায় ১১ টা পর্যন্ত থাকতে হয়েছে আমাদের। স্থানীয় কাউন্সিলরদের পুলিশ আগে এনেই বসিয়ে রেখেছিলো, তাদেরও রাখা হয় আলাপের সময়। ওসি বিভিন্নভাবে প্রচ্ছন্ন হুমকী দিতে থাকেন অনেকসময় হাসতে হাসতে সরাসরিও হুমকী দেন। সবাই অপেক্ষাকৃত নতুন সংগঠক হওয়ায় কিছুটা ভয়ও হয়তো পেয়েছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে বাকিদের বাসায় পাঠিয়ে জহির, ফাহাদ ও আমি আবার বসি ৷ ইমন ভাইয়ের পরামর্শে সিদ্ধান্ত হয় কর্মসূচী পালন করা হবেই, যা হবে পরে দেখা যাবে। তারপর আমরা মটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন গ্যারেজে গিয়ে শ্রমিকদের সাথে কথা বলি, তারপর জহির ভাইয়ের বাসায় না গিয়ে অন্যজায়গায় থাকার ব্যবস্থা করি আমরা। সেখানেই রাতে খাওয়া ও খাওয়া শেষে প্ল্যাকার্ড লিখি আমরা। এরমধ্যেই জহির ভাইয়ের কাছে আবার ফোন আসে থানা থেকে আমরা কর্মসূচীর করবোই বলে জানায় সে।

শ্রমিকরা জানাতে থাকেন যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের হুমকী দেয়া শুরু করেছেন। তখন সকালের জমায়েত নিয়ে আমরা কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তারপর জহির ভাইকে আমি ঘুমাতে বলেছিলাম, উনি রাতে ঘুমাননি। সকালে যথাযথ জমায়েত না হলে আমরা প্রশাসনের চাপে পড়বো সেটা বোঝা যাচ্ছিলো। সকালে উনাদের রেখে আমি সমাবেশস্থলে উপস্থিত হই। তখনও সমাবেশের হতে আরো একঘন্টা, গিয়ে দেখি সকল ভয় ভীতি উপেক্ষা করে কিছুসংখ্যক শ্রমিক উপস্থিত হয়েছেন। শ্রমিকদের পুলিশ চলে যেতে বললেও শ্রমিকরা যান নি। একটু পরেই শ্রমিকদের আরো আরো মিছিল আসতে শুরু করে। জহির ভাই সমাবেশের মাইক হাতে নেন। কথা বলতে থাকেন। একে একে বক্তব্য দিতে থাকেন শ্রমিকসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। ইমন ভাই যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখনই পুলিশ সমাবেশে বাধা দেয়। শ্রমিকরা ক্ষেপে উঠেন। এরপরেই দ্রুত সমাবেশ শেষ হয়। মিছিল শুরু হয়। তখন আর মিছিলের সামনে পেছনে দেখা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত জমায়েত কত হয়েছে তা নিয়ে আমি আর ইমন ভাই কথা বলছিলাম, ইমন ভাইয়ের যা বললেন সে হিসেবে মিছিলে প্রায় ৪ হাজার মানুষ যুক্ত হয়েছিলেন। মিছিল শুরু হয়ে লাকসাম থানার সামনে দিয়ে যখন যাচ্ছে পুলিশ থানার গেট বন্ধ করে গেটে দাঁড়িয়ে আছেন, জানিনা আগের রাতে দেয়া তাদের হুমকীই তখন হয়তো তাদের ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো। দীর্ঘ মিছিল শেষে মিছিল উপজেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে অবস্থান করছিলো তখনই তাদের জানানো হয় রিক্সা চালাতে তাদের আর বাঁধা দেয়া হবে না।

প্লাকার্ডের বিষয়টা বলে নেই, রাতে যখন গ্যারাজে গ্যারাজে আমরাআলাপ করছিলাম, তখন এক শ্রমিক বলছিলেন, ” ভাই, অনিরাপদ অনিরাপদ বলে, আপনারা তো পড়াশোনা করেন। আপনারা নিরাপদ করে দেন। আমরা চালাই”

তখনই ফেস্টুনের লেখাটা মাথায় আসে আমার। ইমন ভাই অনেকগুলো লেখা পাঠিয়েছিলেন সেগুলার অনেকগুলোই আর লেখা হয় নি। লেখার যৌক্তিকতার ব্যাপারগুলো আলোচনা চলুক

জহির, ফাহাদ, জাবেদদের অভিনন্দন। “পুলিশকে ট্রেনিং দেয়া হয় আমাদের ভয় দেখাতে, আমাদের ট্রেনিং হলো ভয় না পাওয়া” সমাবেশ শেষে ইমন ভাই বলেছিলেন।

আমরা অনেক সাহসী হবো।
লাকসামের শ্রমিকদের সালাম।

জ/উম-৬/১১

Leave a Reply