You are currently viewing মওলানা ভাসানীর স্মরণসভায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী যৌথ ঘোষণা

মওলানা ভাসানীর স্মরণসভায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী যৌথ ঘোষণা

স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভাসানী অনুসারী পরিষদ, ছাত্র-যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ, রাষ্ট্রচিন্তা এবং গণসংহতি আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশের ঘোষণা।

২৮ নভেম্বর ২০২০, শনিবার
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা।

এই সমাবেশ ঘোষণা করছে যে,

  • ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ এ অঞ্চলের মুক্তিসংগ্রামের সকল পর্যায়ের বীর যোদ্ধা ও নেতৃত্বের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে। ইতিহাসকে নির্মোহ ভাবে তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের সর্বদলীয় চেহারা ও এদেশের জনগণের অগ্রণী ভূমিকা পাঠ্য-পুস্তকসহ রাষ্ট্রীয় সকল স্তরে তুলে ধরার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
    স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা মওলানা ভাসানীকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।
  • বাংলাদেশের বর্তমান ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী, কর্তৃত্ববাদী শাসন বাংলাদেশের জনগণের জীবনকে এক অবর্ণনীয় দুর্দশার ভেতর ফেলেছে। এই কর্তৃত্ববাদী শাসন দেশকে দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থপাচারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। অর্থনীতি ও সর্বত্র মাফিয়াদের রাজত্ব কায়েম করেছে। এই কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটাতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকার অনুযায়ী ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় রূপান্তর ঘটাতে হবে।
  • বাংলাদেশের সংবিধানের এককেন্দ্রীক, অগণতান্ত্রিক ও একপদে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতাকাঠামো বাতিল করে একটি ভারসাম্য ও জবাদিহিতামূলক, বিকেন্দ্রীকৃত গণতান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেইলক্ষ্যে বিদ্যমান সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে ও গণতান্ত্রিক সংবিধান রচনা করতে হবে।
  • চিন্তা ও বাক স্বাধীনতাসহ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণকারী সকল আইন বাতিল করতে হবে। বৃটিশ ও পাকিস্তানি উপনেবেশিক শাসনের উপযোগী করে তৈরি সকল আইনকে আত্মীকৃত করে যেভাবে বাংলাদেশের জনগণকে উপনিবেশিক প্রজায় পরিণত করা হয়েছে তার আমূল সংস্কার করে স্বাধীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উপযোগী করে প্রণয়ন করতে হবে।
  • বাংলাদেশের বিদ্যমান লুটেরা ব্যবস্থার বিপরীতে একটি উৎপাদনশীল জাতীয় অর্থনীতির বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশে পাচারকরা অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনে উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক বিকাশে কাজে লাগাতে হবে। লুটেরা, পাচারকারী, দুর্নীতিবাজদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।
  • সকল নাগরিকের জন্য সুলভে মানসম্মত শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি-শিল্পসহ সকল শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় ন্যুনতম মজুরী ঘোষণা করতে হবে।কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হবে, বিদেশ গমনে ইচ্ছুক শ্রমিকদের বিনাখরচে দক্ষতা প্রশিক্ষণসহ স্বল্প খরচে ও বিনা হয়রানিতে সকল সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে ও বিদেশে হয়রানি থেকে তাদের রক্ষায় যথাযথ রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
  • বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশী হস্তক্ষেপ, বিদেশী বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতি নতজানু নীতি, দেশের সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দেবার মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকা আর দেশের ভেতর বিভেদ জিইয়ে রেখে বাংলাদেশকে অন্য দেশের ভূ-রাজনৈতিক ক্ষমতার পুতুল বানানো চলবেনা। জনগণের সম্মতি ব্যতীত বিদেশের সাথে সম্পাদিত কোন চুক্তি কার্যকর করা যাবেনা।
  • বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সকল ধর্ম, জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস ও সংস্কৃতির স্বকীয়তা বজায় রেখে বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে সমমর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, যৌননির্যাতন, নারীর ওপর সকল ধরনের নিপীড়ন বন্ধ ও এর পৃষ্ঠপোষকতাকারী বিধিবিধান বাতিল করতে হবে। প্রকৃতি বিরোধী উন্নয়ন বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে, সুন্দরবনসহ বনভূমি ও পাহাড়, সাগর সর্বোপরি প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে।
  • বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামোর সংস্কার, দুর্নীতি-লুটপাট-অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ এবং সংবিধানকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপযোগী করে সংস্কার করার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বর্তমান জনসম্মতিহীন সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে একটি নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই নির্বাচনকালীন সরকারকে জনগণের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম এমন নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করতে হবে।
  • আমরা মনে করি, একমাত্র জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই উপরোক্ত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব করতে পারে। আমরা উক্ত লক্ষ্য অর্জনে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। একই সাথে অপরাপর গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে মিলিতভাবে জনগণের বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও আমরা সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকার অঙ্গীকার করি।

এই সমাবেশ থেকে আমরা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাই।

Leave a Reply