Jahid Sujon, General secretary of Bangladesh Student Federation
Jahid Sujon, General secretary of Bangladesh Student Federation

শ্রমিক হত্যাকান্ড: ঐতিহাসিক ২৪ শে এপ্রিল

শ্রমিক হত্যাকান্ড: ঐতিহাসিক ২৪ শে এপ্রিল

হরতালে বিএনপির পিলার ধরে টানাটানি করার কারণেই ভবন ধ্বস – সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাঁশখালিতে শ্রমিকরাই শ্রমিকদের উপর গুলি করেছে- পুলিশ

রানা প্লাজার মালিক রানা সাভারের যুবলীগের নেতা ছিলেন। রানা জেল হাজতে থাকলেও এখনো তার বিচার চলছে টিমটিম গতিতে। বেতন দেয়ার নাম করে সিলগালা করা বিল্ডিংয়ে সেদিন শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে এসেছিলেন যুবলীগের এই নেতা। নকশায় ৬ তলা বিল্ডিংয়ের অনুমোদন থাকলেও সে বিল্ডিং কীভাবে ৯ তলা হলো? বিল্ডিং উঠানোর সময় রাজউক কোথায় ছিলো? তার কোন হদিস এখনো না মিললেও ১১৭৫ জনের লাশের হদিস পাওয়া গেছে।

তাই আমরা এই হত্যাকে নিখাদ দূর্ঘটনা বলি না, বলি রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার কারণে কাঠামোগত হত্যাকান্ড। যার কারণে বহু মানুষ প্রতি বছর বাংলাদেশে নিহত হন। কেউ সড়ক পথে, কেউ লঞ্চ ডুবিতে, কেউ চিকিৎসা না পেয়ে, কেউ বিচার না পেয়ে, কেউ চাকরি না পেয়ে এবং বাল্যবিবাহের কারণসহ আরো বহু কাঠামোগত হত্যাকান্ডের দুয়ার উন্মুক্ত আছে আমাদের দেশে।

রানা প্লাজা হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে আরো একটি বিষয় উঠে এসেছিলো, গার্মেন্টস শিল্পের ভিতরের শ্রমিকদের নেহায়েত দাস সুলভ জীবনের কথা। রানা প্লাজা পরবর্তী সময়ে এমন কাহিনীর প্রমাণ আছে যে প্রস্রাব করার টাইম না দেয়ার কারণে এক শ্রমিক প্যান্টের ভিতরে প্রস্রাব করে দিয়েছে এবং ইহার কারণে সেই শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

নূন্যতম মজুরী ৮২০০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও প্রায় ৬০% গার্মেন্টস এই মজুরী এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি। অথচ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সংগঠন বিজেএমইর সভাপতি রুবানা হক শ্রমিকের দাসত্বের জীবনকে ছাপিয়ে গিয়ে গরীবের “একরকম শক্তি” আছে বলে করোনাকালে গার্মেন্টস খোলা রাখার যুক্তিও দেখিয়েছিলেন করোনার প্রথম ঢেউয়ে। যেটাকে “রুবানা সিনড্রম” বলে আখ্যায়িত করা প্রয়োজন। আর ২য় ঢেউয়ের তথাকথিত লকডাউনের সময় সব বন্ধ থাকলেও গার্মেন্টস খোলা রয়েছে। তা নাহলে নাকি আমাদের দেশ থেকে এই শিল্প ভারতে চলে যাবে, ভূটান আমাদের পিছনে ফেলে দিবে, আরো কত কী! কই? রানা প্লাজার পরে সারাবিশ্ব দেখলো কর্মক্ষেত্রে কী পরিমাণ নিরাপত্তাহীনতায় থাকে আমাদের শ্রমিকরা, কত অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে তাদের নায্য নিরাপদ কর্ম পরিবেশ। তখনতো একটি বায়ারও বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভিযোগে তা শুনিনি। অর্থাৎ পুরো ব্যপারটার মধ্যেই একটা শ্রমিক শোষণের উদগ্র বাসনা বিদ্যমান।

শ্রম আইনের ২৩ এর ৪ ধারায় অসৎ আচরণের অভিযোগ এনে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ছাঁটাই করতে পারবেন। ফলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কেউ যদি তার বা তাদের সাথে অনিয়মের কথা বলে আন্দোলন করে তখন শ্রমিকদের চূড়ান্ত শিক্ষা দিতে মালিকপক্ষ হাজির হন ২৩ এর ৪ ধারা নিয়ে। অথচ যেকোন অনিয়মের জন্য প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করা আমার সাংবিধানিক অধিকার। একদিকে সংবিধান অধিকার দিবে, আবার সেই অধিকার কেড়ে নেয়া হয় অন্য একটি আইন দিয়ে। এটা গাছের আগায় পানি দিয়ে গোড়ায় করাত চালানোর মতো।

কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জের আরেক গার্মেন্টস শ্রমিক ভাই আক্ষেপ করে বলেছিলেন এই করোনার সময়ে রাতে চাকরি রেখে গার্মেন্টস থেকে বাড়ি আসি সকালে চাকরি থাকে কিনা জানিনা!

তাই আমদের যদি রানা প্লাজার শ্রমিকদের আজ যথার্থই স্মরণ করতে হয়, তার জন্য সবচেয়ে বড় কাজ হলো রাষ্ট্রের মিথ্যের বেশাতি ভেঙে চুরমার করে রাষ্ট্র ও সংবিধানের গণতান্ত্রিক রুপান্তর। যেখানে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। মানুষ স্বভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি পাবে।

জাহিদ সুজন
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন