গণসংহতি আন্দোলন নিয়ে কয়েকটি অসত্য প্রচারণা প্রসঙ্গে

গত বেশ কিছুদিন ধরেই গণসংহতি আন্দোলন নানান রকম অসত্য প্রচারণার শিকার হয়ে আসছে। এই অভিযোগগুলোর অধিকাংশই নিতান্তই মিথ্যা হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের সংগঠনের দিক থেকে পদ্ধতিগত ত্রুটি হয়তো ছিল। কিন্তু আমরা চাই বিষয়টা নিয়ে খোলামেলা আলাপ করতে, কেননা জনগণের মাঝ থেকে গড়ে ওঠা একটা সংগঠন হিসেবে আমরা জনগণের কাছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাটাকে আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি।

১. এই সব প্রচারণা কতটা অবিবেচক ও ভিত্তিহীন হতে পারে, সেটার আলোচনা পিপিই বাণিজ্যের অভিযোগ বিষয়টি দিয়েই সহজে বোঝা যাবে। বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হবার পর মার্চ মাসেই আমরা সিদ্ধান্ত নেই সারাদেশে আমাদের কর্মীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সক্রিয় থাকবেন; তারা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার উপকরণ বিতরণ, অসুস্থ মানুষদের জন্য ওষুধ পৌঁছে দেয়া, গণপরিবহণ ও বিভিন্ন স্থানকে জীবানুমুক্ত করা, করোনা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা, দরিদ্র মানুষদের খাদ্য পৌঁছে দেয়া ইত্যাদি কাজ করবেন।

সকলেরই নিশ্চয়ই মনে আছে সেই মূহুর্তে একটা তীব্র পিপিই সঙ্কট দেশজুড়ে ছিল। চিকিৎসকরা নিরাপত্তা পোষাক বা পিপিইর অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। স্বেচ্ছাসেবীদেরও কাজ করে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আমরা তাই বাজার যাচাই করে উপলদ্ধি করি যে, খুব ভালো মানের নিরাপত্তা পোষাক আমরা নিজেরাই বানিয়ে নিতে পারবো। প্রথমে আমাদের নিজেদের স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য পিপিই বানাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। অন্যান্য বহু সামাজিক, রাজনৈতিক ও পাঠাগারের মত সামাজিক সংগঠনের বহু বন্ধুও আমাদের কাছে অনুরোধ জানান পিপিই তারা পেতে পারেন কি না। বস্তিবাসীদের মাঝে কাজ করেন, এমন স্বেচ্ছাসেবীরাও একই অনুরোধ জানান। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের জন্যও আমরা পিপিই তৈরি করি, এরপর দেশজুড়ে নানান স্থান থেকে স্বেচ্ছেসেবীরা পিপিইর জন্য আবেদন করেন, তাদের সকলকে আমরা পিপিই দেয়ার চেষ্টা করেছি। বেশ কিছু হাসপাতালের চিকিৎসকবৃন্দ আমাদের পিপিইর মান দেখে আগ্রহী হন এবং পিপিই প্রদানের অনুরোধ করেন। আমরা তাদেরকেও এটা প্রদান করি।

পিপিইর দাম প্রসঙ্গেঃ আমরা সারাদেশের স্বেচ্ছেসেবীদের পিপিই দিয়েছি বহু ক্ষেত্রে বিনামূল্যে। কয়েকটি ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবীদের মাঝেও যারা সামর্থ্যবান, তাদেরকে আমরা অনুরোধ করেছি উৎপাদন খরচটা তারা যেন দেন। আর্থিক সঙ্গতি কম বলে নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবীদেরও আমরা উৎপাদন মূল্যে পিপিই দিয়েছি, বেশকিছু ক্ষেত্রে ভর্তূকি দামে। চিকিৎসকদের কাছ থেকে আমরা ৭০০ টাকা রেখেছি। কোন কোন ক্ষেত্রে পিপিই বাবদ কেউ কেউ বাড়তি শুভেচ্ছামূল্যও দিয়েছেন। আমাদের কাছ থেকে পিপিই নিয়েছেন এমন হাসপাতালের মধ্যে ঢাকা কম্যুনিটি হাসপাতাল, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের মত সুখ্যাত হাসপাতালও আছে। পাবনার বেড়া হাসপাতালে আমরা বিনামূল্যে পিপিই সরবরাহ করেছি।

এই প্রকল্পের বিস্তারিত হিসাব নিকাশ এই কাজে দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রকল্প শেষ করা মাত্রই কেন্দ্রীয় দপ্তরে পেশ করেছেন। মোট বিতরণ করা ও তখনও হাতে থাকা পিপিই-র বিস্তারিত বিবরণ আমরা আমরা কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তের সময়েই তুলে রেখেছিলাম স্বচ্ছতার স্বার্থে। এই লিংকে (https://bit.ly/2CX9vOc) যে কেউ দেখতে পারেন, শ্রমিকের মজুরি এবং উৎপাদন খরচের বাইরে পিপিইর দামের সাথে আর কোন মুনাফা যুক্ত করা হয়নি। এবং এই তালিকাতে আপনারা যেমন একাধিক পাঠাগার, আঞ্চলিক স্বেচ্ছাসেবীদের কথা পাবেন যাদের একেবারে বিনামূল্যে পিপিই দেয়া হয়েছে, তেমনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের কথাও পাবেন যারা তখন জরুরি সেবা দিলেও তখন পর্যন্ত কোন পিপিই পাচ্ছিলেন না কোথাও, কিংবা মানহীন সরকারী পিপিই দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছিল তাদেরকে। যে কেউ চাইলেই তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টা জানতে পারবেন।

এপ্রিলেই আমরা এই প্রকল্প বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই কারণ এই কারখানা ও পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হন। ততদিনে বাজারে আরও উৎসও চলে আসে পিপিইর। আমাদের ক্ষুদ্র কারখানা তাই চালিয়ে যাওয়ার দরকার আমরা দেখিনি, এতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছিল। যখন সরকারের অসহযোগিতা ও দায়িত্ব পালনে অনীহার কারণে চিকিৎসকবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ ভীষন অসহায় অবস্থার মধ্যে ছিল তখন আমাদের সীমিত সামর্থ্য সত্ত্বেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় এইসব কাজ করে আমরা মানুষের কাছ থেকে অভূতপূর্ব ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু সরকার ও কতিপয় সংকীর্ণ স্বার্থের মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। এই সময়ে কাছাকাছি মানের পিপিই অন্য উৎপাদকরা ১২০০-১৫০০ টাকায় প্রতিটি বিক্রি করেছেন। প্রশ্ন হলো, যে কয়দিন ছোট এই কারখানা চালু ছিল, সেই কয়দিনে আসলে সর্বোচ্চ কত টাকা মুনাফা বা দুর্নীতি করার সুযোগ ছিল? বরং পিপিই খাতে আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত সামান্য কিছু অর্থ ভর্তুকি দিতে হয়েছে সহায়তা তহবিল থেকে। গরিব মানুষের জন্য নেয়া টাকা মধ্যবিত্তকে আমরা ভর্তুকি দিতে চাইনি বলেই চিকিৎসদের পিপিইর জন্য আমরা উৎপাদন খরচটিকে দাম হিসেবে নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করেছিলাম। বিপুল ব্যবসা করার সুযোগ সত্যিই ছিল এমন একটা সময়ে সেটা না করে যারা স্বেচ্ছাসেবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আতঙ্কের সেই দিনগুলোতে; স্থানীয় ভিত্তিতে মানসম্মত পিপিই তৈরি, সেটাকে জীবানুমক্তকরণের প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ এমন একটি প্রকল্পটি যারা ভেবেছেন, বাস্তবায়ন করেছেন, সাধ্যমত বিলিয়ে দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে এই কুৎসার উদ্দেশ্য যে কেউই সহজে অনুমান করতে পারবেন।

২. হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেয়ার প্রসঙ্গঃ বছর দুয়েক আগে পঞ্চগড়ে আমাদের সাবেক একজন সদস্যের (অনেক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবর্তীতে আঞ্চলিকভাবে আধা সক্রিয় ছিলেন) স্ত্রীর ঝুলন্ত মৃতদেহ তাদের বাড়িতে পাওয়া যায়। অত্যন্ত মর্মান্তিক এই ঘটনাটি আমাদের সকলকেই ব্যথিত করেছিল।ভুক্তভোগী মৃতের পরিবার স্থানীয়ভাবে যথেষ্ট পরিচিত, তার পিতা একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, স্থানীয় বার কাউন্সিলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব ছিলেন। তিনি জেলা সিপিবির সভাপতিও ছিলেন দীর্ঘদিন। তাঁর বড় বোন একজন চিকিৎসক। স্থানীয় পৌরসভার চেয়ারম্যানও তাদের আত্মীয়। এছাড়াও স্থানীয় বহু গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ তাদের আত্মীয়।

বদ্ধঘর থেকে পুলিশ, সাংবাদিক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় ও মৃহদেহের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাঁর পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় যে, তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, তাঁরা কোনো হত্যা মামলাতে যাবেন না। তথাপি যেকোনো অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় যেহেতু অপমৃত্যু মামলা হয়, এক্ষেত্রেও অধিকতর তদন্তের স্বার্থে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে তাঁর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন এবং পঞ্চগড় জেলাপ্রশাসক বরাবর গণস্বাক্ষর সহ একটি আবেদন জমা দেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মামলার তদন্তও করা হয়।

মৃত্যুর ঘটনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে পরিবারের সদস্যদের প্রতি যেকোন মামলা বা আইনগত ব্যবস্থার উদ্যোগের পক্ষে পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। পরবর্তীতে এই দম্পতির একজন বন্ধু ভুক্তভোগীর সাথে আলাপের কিছু ম্যাসেজ বিনিময়ের ক্রিনশট দিয়ে আমাদের দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতার সাথে কথা বলেন। সেখানে তাকে চড় মারার কথা ছিলো। দলের কেন্দ্রীয় নেতা তখন এ বিষয়গুলোকে নির্যাতনের স্বাক্ষ্য হিসেবে মৃতের পরিবারের সদস্যদের হাতে দিতে বলেন যাতে তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।

যে কোন নিপীড়নের ঘটনাতে আমাদের একটা পরিস্কার সাংগঠনিক আদর্শিক অবস্থান রয়েছে। যেহেতু মৃত্যুর পরে আমরা জানতে পারি তাদের দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে নির্যাতনের ঘটনা ছিলো, ফলে সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সেই সময়ে সিদ্ধান্ত নেই সাংগঠনিকভাবে তার (আমাদের সাবেক সদস্য) সাথে সকল রকম সম্পর্ক ছিন্ন করার। কারণ এমনকি দাম্পত্য কলহ, মারামারি, ঝগড়া বা অন্যকোন কারণে ভুক্তভোগী আত্মহত্যাও করে থাকলে তার দায় তিনি এড়াতে পারেন না।

ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা মৃতের পিতা-মাতার মনেও সন্তান হারাবার এই দুঃসহ স্মৃতি জাগিয়ে তুলতে চাই না। জার্মানিতে বসবাসকারী একজন ব্লগার উত্থাপন করেছেন বলেই তা বলতে হচ্ছে। আমাদের দিক থেকে আমরা পরিস্কার করেই বলে এসেছি এবং এখনো বলতে চাই, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং হত্যা কিংবা এমনকি আত্মহত্যার উস্কানি দেয়ার জন্য যদি পুনর্বিচারকাজ শুরু হয়, আমরা ভিক্টিমের পরিবারের পাশেই দাঁড়াবো। এইক্ষেত্রে কোন স্বজনতোষণের প্রশ্নই আমাদের সংগঠনের দিক থেকে আসে না।

৩. গণসংহতি আন্দোলনের একটি সহযোগী সংগঠনের একজন কেন্দ্রীয় নেতা অনেকগুলো অস্পষ্ট অভিযোগ তুলে সম্প্রতি হঠাৎ করেই পদত্যাগ করেছেন। তার অভিযোগগুলোর সবচাইতে বিড়ম্বনার দিক হলো সেখানে কোন ঘটনার কথা বলা হয়নি, কার কার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেটা কখনো বলা হয়নি। প্রতিটি বিষয়ই বিমূর্ত রেখে কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় দলের ভেতরে কোন আলোচনা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। আমরা তার প্রতি অনুরোধ রাখবো যেন অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্টভাবে ঘটনাসহ সংগঠনকে অবহিত করেন। যেকোন অভিযোগের যথাযথ তদন্ত করতে আমরা আগ্রহী। তদন্তে তাঁর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংগঠন কঠোর অবস্থান নিয়ে অভিযোগসমূহ নিস্পত্তি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

শুধু একটি প্রসঙ্গ এখানে বলে রাখা প্রয়োজন মনে করছি। অভিযোগ করা হয়েছে, আমাদের কোন কর্মী তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন, নানান বাস্তবতায় মনে হয়েছে যে তিনি নারায়নগঞ্জের কথা বলেছেন। আমরা অনুরোধ করবো অবিলম্বে এই বিষয়টি নিকটস্থ থানায় কিংবা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থায় জানাতে, না হলে এটাকে বাইরের কেউ নিছক কুৎসা হিসেবেই ভাববেন। কিংবা তিনি আইনজীবীদেরও শরণাপন্ন হতে পারেন। আমরা এক্ষেত্রে সকল রকম পদ্ধতিগত সহযোগিতাই করবো, যদি আমাদের কোন কর্মীও এটা করে থাকেন।

তবে আমাদের কর্মীদের সাথে কথা বলে যা জানা গেছে, সেটা হলো করোনাকালীন দেশের মাঝে সবচাইতে দীর্ঘ ও বিপদজনক একটা ত্রাণ উদ্যোগে আমাদের নারায়নগঞ্জের কর্মীরা ছিলেন। সেখানে অভিযোগকারীর জীবনসঙ্গীও যুক্ত ছিলেন এবং প্রভূত পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু এই ত্রাণ উদ্যোগের পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কিত নানান বিষয়ে স্থানীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে তাঁর মত বিরোধ হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষই অসহিষ্ণু হয়ে উত্তেজিত ভাষা ব্যবহার করেন। সেই কথোপকথনের বিস্তারিত অনুলিপি আমাদের কাছে আছে। আমরা এই ক্ষেত্রেও দুঃখ ও ক্ষমা প্রকাশ করে বলতে চাই যে, ব্যক্তি (অভিযোগকারী) উত্তেজিত হওয়াটা আমাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশে বিচার্য না হলেও রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে সহিষ্ণুতা ও ধৈর্যশীলতা আমরা আকাঙ্ক্ষা করি। যে কোন উস্কানির মুখেও স্থানীয় শাখার নেতা-কর্মীদের উচিত ছিলো নিজেদের অবস্থানকে অনুত্তেজিত ভাষায় বারংবার বলে যাওয়া। উত্তেজিত হওয়া, পালটা দাপট দেখানো তাদের কাজ নয়। কিন্তু এই কথোপকথনের বিস্তারিত পাঠ করলেই যে কেউ বুঝতে পারবেন এইখানে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের মতো কিছু ঘটেনি।

বিষয়টি নিয়ে অভিযোগকারী যখনই আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবহিত করেছেন, কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অবিলম্বে নির্দেশনা দেয়া হয় পুরো বিষয়টি আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে নিস্পত্তি করার এবং আর কোন রকম তর্ক বা বিবাদ না করবার জন্য। স্থানীয় সংগঠনের নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সে কাজ করাও হয়েছে। তারপরও অভিযোগকারী যদি চান- নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতৃত্ব ও অভিযোগকারী উভয়পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য তৃতীয় কোন ব্যক্তির মধ্যস্ততায় কথা বলতে এবং নিস্পত্তি করতে তাতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না।

৪. আমাদের একজন কর্মীর ৬ বছর আগেকার মেসেঞ্জার স্ক্রিনশট দেয়া হয়েছে যেখানে নারীদের সম্পর্কে সংগঠনের মত ও চিন্তার বিপরীত ও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। এই রকম ভাষার প্রয়োগ কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য না, ইনবক্সেও না। এর কোন সমর্থন সম্ভব নয়। আমাদের ঐ সদস্য ইতিমধ্যে এ জন্য বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তথাপি এই ধরনের ঘটনার দলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নজির আছে এবং এ ক্ষেত্রেও যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে সে প্রক্রিয়া চলমান আছে।

৫. প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার মনে করছি যে, রাজনৈতিক প্রয়োজনে কখনো কখনো তর্ক-বিতর্কে যেতে হলেও আমরা কখনোই কারও বিরুদ্ধে কোন প্রচারণা করিনি। ফেসবুক কিংবা অন্য কোন সামাজিক মাধ্যমে কারও বিরুদ্ধে দলবদ্ধভাবে অন্যদের উস্কে দেয়ার কোন ঘটনা গণসংহতির নেতৃত্বের দিক থেকে কোনদিনও ঘটেনি, প্রতিপক্ষ ব্যক্তি কিংবা সংগঠন যাই হোক। গালিগালাজ সংস্কৃতির বিরোধিতা করতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রায়ই পালটা গালিগালাজ সংস্কৃতিই বিকশিত হয়, আমরা সর্বদাই সেটার বিরোধিতা করে এসেছি। কখনো কখনো বরং গালি দেয়া কিংবা অসহিষ্ণুতা প্রদর্শন না করার নির্দেশনা দেয়ার কারণে আমরা নিজেদের কর্মীদের ক্ষণিকের অসন্তোষের শিকার হলেও মনে করেছি এর দূরবর্তী ফলাফল আমাদের পক্ষেই যাবে এবং গিয়েছেও। এটা বাংলাদেশে একটা সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতেও ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কেউ বা কোন গ্রুপ যদি আমাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপপ্রচার চালায়ও, তাতে আমাদের লাভ/ক্ষতি যাই হোক না কেন, আমরা আমাদের জরুরি রাজনৈতিক কর্তব্য পালনে কোন অবহেলা করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। রাজনীতির নামে যে মতান্ধতার সংস্কৃতি কিংবা প্রতিপক্ষকে নির্মূলের রাজনীতিতে আমরা আদৌ বিশ্বাস করি না। এমনকি এদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনকেও এই খারিজীপন্থা থেকে পথ দেখানোকে আমরা কর্তব্য বলে মনে করি। এটা সত্যি যে আমাদের সকল স্তরের নেতাকর্মী সর্বদা তা রক্ষা করতে সক্ষম হন না, খুব বিরল কিছু ঘটনাতে আচরণগত অসহিষ্ণুতা দেখা গেছে। সে জন্য আমরা দুঃখপ্রকাশ করি। কিন্তু আমরা সেই মানদণ্ডে পৌঁছাবার চেষ্টায় সর্বদা নিযুক্ত রয়েছি।

সকলের কাছেই আহবান জানাবো, আমাদের কোন ভুল ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা দেখলে অবশ্যই জানাবেন। জনগণের রাজনৈতিক দল হিসাবে আমরা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার ভাবমূর্তি নিয়েই বিকশিত হতে চাই। আমাদের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা আমরা দেখতে পেয়েছি। অনেক কর্মী ও সদস্যের কাছে কোন কোন বিষয়ে দলের অবস্থান পরিস্কার করার প্রশ্ন আসলে সময়মতো তা নিষ্পত্তি করা যায়নি। ফলে সংগঠনের অনেক কর্মী ও সদস্য নিজেদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও ক্ষোভের অনুভূতি নিয়ে আছেন। আমরা অঙ্গীকার করছি, এই বিষয়েও দল আগের যেকোন সময়ের চাইতে যত্নশীল হবে। আমাদের সমাজ বিশুদ্ধ না, ফলে ব্যক্তি ও সাংগঠনিক নেতৃত্বের সকল পর্যায়েই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সংগত। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বর্তমান উদ্ভুদ প্রসঙ্গগুলো আমাদের নেতাকর্মীদের আরও বিবেচক, আরও সহিষ্ণু এবং সংগঠন পরিচালনায় আরো মনোযোগী করবে। দলের মধ্যে যথাযথ সাংগঠনিক প্রক্রিয়া তৈরির ভেতর দিয়েই আরো যোগ্য নেতৃত্ব সামনে আসবেন।

গণসংহতি আন্দোলন এই অভিযোগগুলোকে বা আরো কোন অসন্তোষ ও অভিযোগ থাকলে তা সংগঠনের ভেতরে আলোচনা ও তার প্রক্রিয়াগত সমাধানের পথ অনুসন্ধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করি এই প্রক্রিয়ায় পাল্টাপাল্টি দোষারোপ এর সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে জনগণের বৃহত্তর স্বার্থের অধীনে কিভাবে কাজ করা যায় তার একটা পদ্ধতি আমরা তৈরি করতে পারব।

নির্বাহী সমন্বয়কারী
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি
গণসংহতি আন্দোলন।

Leave a Reply